অবাঙালিদের কড়া বার্তা দেওয়ার সময় এসেছে

জগবন্ধু চ্যাটার্জি

বাঙালি যেন নিজভূমে পরবাসী। নিজের রাজ্য। সেখানে সে নিজের ভাষায় কথা বলতে পারে না। জেলার দিকে, গ্রামের দিকে যদিও বাংলা বেঁচে আছে, শহর কলকাতা থেকে বাংলা একেবারেই যেন নির্বাসিত। শুধু ইংলিশ মিডিয়ামকে দোষারোপ করে লাভ নেই। রাস্তায়, দোকানে, ট্যাক্সিতে কতটুকু বাংলা শুনতে পাই?‌
সবাই এখানে হিন্দিতে কথা বলতেই অভ্যস্থ। এমনকী বাঙালিরাও সেই স্রোতেই গা ভাসিয়েছে। বাংলা না বলাটাই যেন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদিন আপনার মোবাইলে বিভিন্ন কোম্পানির ফোন আসে। বেশিরভাগই হিন্দিতে। এমন নয় যে তাঁরা দিল্লি বা মুম্বই থেকে করছেন। এই কলকাতার অফিস থেকেই ফোন আসছে। কিন্তু টেলিকলার বাংলা জানে না। বা জানলেও বলবে না।

bangla2
ট্যাক্সিতে উঠুন। এখানে তো আরও ভয়ঙ্কর। বাঙালি ড্রাইভার কমতে কমতে প্রান্তিক হয়ে এসেছে। যদিও বা কয়েকজন আছেন, তাঁরাও শুরুই করেন হিন্দি দিয়ে। উত্তর কলকাতায় তবু কিছুটা বাংলা পাবেন। দক্ষিণ কলকাতার বিশেষ কিছু জায়গায় হয়ত পাবেন। বাকি অংশে বাংলা কোথায়?‌ অধিকাংশ দোকানেই আপনাকে হিন্দি শোনার জন্য তৈরি থাকতে হবে। অবাঙালিদের আমরা বাংলা শেখানোর তাগিদই অনুভব করিনি। এই তালিকায় মুসলিমরা যেমন আছেন, তেমনি মারওয়াড়ি, গুজরাটি, বিহারীরাও আছেন। পার্ক সার্কাস, তপসিয়া, তিলজলা, খিদিরপুর, গার্ডেনরিচ, রাজাবাজারে আপনি বাংলা শুনতে পাবেন না। ঠিক তেমনি বড়বাজারে গেলেও পাবেন না। মনে হবে, দোষটা তাদের নয়, আপনার। কারণ আপনি বাংলা জানেন। আপনাকেই তাদের সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলতে হবে।
যাঁরা কয়েকমাসের জন্য এসেছেন, তাঁদের কথা বলছি না। কিন্তু যাঁরা বহু বছর ধরে এখানে আছেন, যাঁদের এখানেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা, তাঁরাও বাংলায় কথা বলেন না। বরং আমরা আদিখ্যেতা করে তাঁদের সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলি। অনেক হয়েছে। এবার এটা বন্ধ হওয়া দরকার। একটা কড়া বার্তা পৌঁছে দেওয়া দরকার।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.