Categories বিনোদন

ভুবনবাবুদের স্মার্ট হওয়ার দরকার নেই, তাঁরা এমনই থাকুন

কুন্তল আচার্য

এই ছবিটা দেখার কথাই ছিল না। এমনকী এরকম একটা ছবি যে মুক্তি পেয়েছে, সেটাই জানতাম না। কিন্তু ছবিটা দেখা হয়ে গেল।

গিয়েছিলাম নজরুল মঞ্চে। উদ্দেশ্য ছিল, ব্যোমকেশ বক্সীর নতুন ছবি দেখা। কিন্তু একটা পোটার চোখ টেনে নিল। ছবির নাম— ভুবনবাবুর স্মার্টফোন। ব্যোমকেশ শেষ হওয়ার পর এই ছবি শুরু। তার মানে সময়ে ক্ল্যাশ করছে না। ব্যোমকেশ দেখার অনায়াসেই এটা দেখা যায়। একসঙ্গে দুটোরই টিকিট কেটে ফেললাম।

আমি নিজেও একটু সেকেলে টাইপের। স্মার্টফোন থেকে একটু দূরে দূরেই থাকি। হয়ত সেই কারণেই নামটা দেখে ভাল লেগে গেল। বুঝতে পারলাম, স্মার্টফোন নিয়ে কোনও একজন বয়ষ্ক লোক নির্ঘাত বিড়ম্বনার শিকার। তাই নিয়েই এই ছবি। তার ওপর পোস্টারে দেখলাম পরাণ বন্দ্যোপাধ্যয়ায় আর খরাজ মুখার্জির ছবি। দুজনেই আমার খুব প্রিয় অভিনেতা। এই দুজন যখন আছেন, এই ছবি ভাল না হবেই।

ভুবনবাবু অকৃতদার মানুষ। কম্পিউটারের যুগেও তিনি লেখেন টাইপ রাইটারে। এখনও ধুতি পরেন। স্মার্ট ফোন তো দূরের কথা, সেকেলে মোবাইলটুকুও রাখেন না। কিন্তু অফিসের কাজে বেশ দক্ষ। দারুণ ড্রাফট করেন। নিয়ম মেনে কাজ করেন।

কিন্তু এই ভুবনবাবু পড়লেন মহা ফ্যাসাদে। এক নতুন বস এসে কর্পোরেট আদব কায়দা আনতে চাইছেন। তিনি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়েছেন। সেখানে জানিয়ে দিচ্ছেন, কবে মিটিং আছে। বেচারা ভুবনবাবু জানতেও পারছেন না। বকুনি খাচ্ছেন।

বাধ্য হয়ে তাঁকেও একটা স্মার্ট ফোন কিনতে হল। তারপর থেকেই বিড়ম্বনার শুরু। কখনও রাতের বেলায় কোনও মহিলাকে ভুল করে ফোন করে গালাগাল শুনছেন। কখনও নাটক দেখার সময় বেজে উঠছে বেরসিক ফোন। একের পর এক বিড়ম্বনা বেড়েই চলে।

শেষমেষ কী হল?‌ সে না হয় তোলা থাক। কিন্তু মোটের ওপর বেশ দরদ দিয়ে বানানো ছবি। ভুবনবাবুর ভূমিকায় চিন্তা মুখোপাধ্যায়। থিয়েটারের মানুষ। খুব বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন চরিত্রটা। তাহলে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বা খরাজ মুখার্জির ভূমিকাটা কী?‌ একজন পকেটমারদের সর্দার। একজন পুলিশ। এই দুজনের কাছে প্রত্যাশা একটু বেশিই ছিল। কিন্তু চিত্রনাট্য সেই প্রত্যাশা কেড়ে নিল। দুজনকেই কার্যত ভাঁড়ে নামিয়ে আনা হল। এমন দুই শক্তিশালী অভিনেতার প্রতি বড্ড অবিচার হল। তাছাড়া, এই দুটো চরিত্রও বেশ বেমানান।

হলে সর্বসাকূল্যে দশ–বারোজন লোক। অন্যান্য শোগুলোতেও ছবিটা নিশ্চয় এরকমই থাকে। হল থেকে হয়ত দ্রুত উঠেও যাবে। দুই নতুন পরিচালকের প্রথম প্রয়াস। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, ছবিটা বেশ ভাল। একটা যত্ন ও ভাললাগার ছাপ আছে। বারবার মনে হয়, তথাকথিক স্মার্টনেসটা সবার জন্য নয়। ভুবনবাবুরা এমনিতেই বেশ সুন্দর। তাঁদের আর স্মার্ট হওয়ার দরকার নেই। তাঁরা যেমন আছেন, তেমনই থাকুন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.