অজয় কুমার
কয়েকদিন ধরেই জোর গুঞ্জন শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে।
কেউ বলছেন, তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন।
কেউ বলছেন, জল মাপছেন। গেলেও এখন যাবেন না। ঠিক ভোটের দু তিন মাস আগে যাবেন।
কেউ বলছেন, সরাসরি বিজেপিতে নয়। আলাদা দল গড়তে পারেন। বিজেপির সঙ্গে আসনরফা হতে পারে।
কেউ বলছেন, এসব হাওয়া ছড়িয়ে তৃণমূলে নিজের দর বাড়াতে চাইছেন। নেত্রীকে চাপে রাখতে চাইছেন।
শেষপর্যন্ত কোনটা ঘটবে বলা মুশকিল। তবে জল্পনাটা শুভেন্দু নিজেও জিইয়ে রেখেছেন। বলা ভাল, মাঝে মাঝে উস্কে দিচ্ছেন। কই, বাকিদের নিয়ে তো এমন গুঞ্জন হয় না। ২০১৪ তেও শোনা গিয়েছিল, তিনি বিজেপিতে আসছেন। শোনা যায়, শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠকও হয়ে গিয়েছিল। শুধু যোগ দেওয়াটাই বাকি ছিল। তারপর সেই জল্পনা থেমে যায়। লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে আবার সেই জল্পনার পালে নতুন হাওয়া লেগেছে।
এটা ঠিক, শুভেন্দুর পক্ষে মান সম্মান নিয়ে তৃণমূলে থাকা কঠিন। তাঁকে যতই গুরুত্ব দেওয়ার অভিনয় করা হোক, তিনি নিজে জানেন, একুশের নির্বাচনে তৃণমূল জিতলে তাঁর ডানা ছাঁটার কাজটা একটু একটু করে শুরু হবে। ক্রমশ তাঁকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার চেষ্টা হবে। ডানা ছাঁটার চেষ্টা যে এখনই হচ্ছে না, তা নয়। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানাভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
শুভেন্দুকে মালদা, মুর্শিদাবাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মালদায় সফল না হলেও মুর্শিদাবাদে দুটি লোকসভা আসনে তৃণমূলকে জিতিয়েছেন। লোকসভা ভোটের পর বাঁকুড়া–পুরুলিয়ার দায়িত্বও দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি পর্যবেক্ষক পদটাই তুলে দেওয়া হল। অনেকে মনে করেন, শুভেন্দুর ডানা ছাঁটার জন্যই পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়া হল।
শুভেন্দুর বাড়ি কাঁথিতেই। অথচ, সেখানে বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক এমন একজন, যাঁর সঙ্গে শুভেন্দুর প্রায় ছায়া মাড়ামাড়ির সম্পর্কও নেই। খোদ তাঁর এলাকায় তাঁর অপছন্দের লোককে প্রার্থী করা হবে। এর থেকে বড় অপমান আর কী হতে পারে!
পিকে–র কোনও কর্মসূচিতেই দেখা যায়নি শুভেন্দুকে। সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেছেন। দলকে বার্তা দিতে চেয়েছেন।
আরও অনেক ঘটনা আছে, যা থেকে বিভাজনটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এবং তা বিচ্ছেদের দিকে ঠেলে দিতেই পারে। তাই শুভেন্দুর দলবদল হলে তা মোটেই অবাক করার মতো খবর নয়। বরং, সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।