গজেন্দ্র, প্লিজ এবার অন্তত দেওয়াল লিখনটা পড়তে শিখুন

সরল বিশ্বাস

 

তখন আমাদের ছোটবেলা। রামায়নের মাদকতা কাটিয়ে আমরা পা রেখেছি মহাভারতের যুগে। রবিবার সকাল মানেই রাস্তা ফাঁকা। রবিবার মানেই অন্তত সকালের দিকে সব কাজ শিকেয় তুলে রাখা। রবিবার মানেই টিভির সামনে বসে পড়া। তখন ভীষ্ম মানে মুকেশ খান্না, দুর্যোধন মানে পুনিত ইশ্বর, ভীম মানে পরবীন কুমার, যুধিষ্ঠির মানে গজেন্দ্র চৌহান।

সেই থেকে গজেন্দ্রকে চেনা। এবং কৈশোরের কী অভিঘাত। তখন গজেন্দ্রকেই মনে হত সততার প্রতিক। তারপর সময়ের নদীতে অনেক জল গড়িয়ে গেল নিজের নিয়মে। সেই গজেন্দ্র চৌহানকে নিয়ে সারা দেশে হইচই। তিনি হঠাৎ করে এফটিআইআইয়ের চেয়ারম্যান হয়ে গেলেন। যে কোনও নিয়োগ নিয়ে কিছু সমালোচনা হয়ে থাকে। কোনও নিয়োগই সবাইকে খুশি করতে পারে না। কিন্তু এর আগে আর কারও নিয়োগ নিয়ে গোটা দেশে এভাবে ঝড় ওঠেনি।

gajendra2

এটা ঘটনা, এর আগে যাঁরা যাঁরা এফ টি আই আইয়ের দায়িত্বে ছিলেন, ধারে ভারে তাঁদের সঙ্গে কোনওভাবেই তুলনীয় নন গজেন্দ্র চৌহান। সেই মহাভারতের পর কী কী কাজ করেছেন, তা গুগল সার্চে খুঁজলে হয়ত পাওয়া যাবে। কিন্তু দেশের আমজনতা জানে না। চলচ্চিত্র পরিচালনা বা প্রযোজনার সঙ্গে দারুণভাবে জড়িয়ে, এমনটা নয়। চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত,এমন অভিযোগ নেই। দারুণ চলচ্চিত্র-বোদ্ধা, এমনটা বোধহয় নিজেও দাবি করবেন না। গত আড়াই দশকে তাঁর একটাই পরিচয়, বিজেপি শিবিরে নাম লেখানো একজন শিল্পী। সেই আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবেই তাঁর মনোনয়ন।

কোনও দল যখন ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের বৃত্তে থাকা অনেককেই অনেক জায়গায় বসানো হয়। বহুদিনের পুরানো রেওয়াজ। কোনও দলই এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কোথায় ‘নিজের লোক’ বসাব, আর কোথায় উৎকর্ষকে গুরুত্ব দেব, সেই পরিমিতিবোধটাই আসল। পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটকে সেই দলতন্ত্রের আওতার বাইরে রাখা উচিত, এই বোধটুকু বোধ হয় শাসক শিবির হারিয়ে ফেলেছিল। গজেন্দ্র, আপনার মনোনয়ন যে একেবারেই রাজনৈতিক আনুগত্যের ফল, এই সহজ সত্যিটুকু অন্তত মেনে নিন। চলচ্চিত্র ও বিনোদন পরিবারের প্রায় সকলেই জানে ও বিশ্বাস করে এই নিয়োগ কোনও উৎকর্ষতার মানদন্ডে নয়। একের পর এক, অনেকেই মুখ খুলছেন। যাঁরা মুখ খুলছেন, ব্যক্তগত ঈর্ষা থেকে খুলছেন, এমনটাও মনে হচ্ছে না। অনুপম খের, ঋষি কাপুরদের মনে হয়েছে, ছাত্রদের দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সেখানে আপনি কী বলে বসলেন ? কে অনুপম খের ? কে ঋষি কাপুর ? ভাগ্যিস বলে বসেননি, কে রণবীর কাপুর ? যদি অমিতাভ বচ্চন বলতেন, যোগ্য লোককেই চেয়ারম্যান করা উচিত, তাহলে কী বলতেন ? কে অমিতাভ বচ্চন ?

gajendra1

মনে হয়েছিল, যোগ্যতায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও আস্তে আস্তে হয়ত এই প্রতিষ্টানের গুরুত্ব বুঝবেন। আস্তে আস্তে হয়ত নিজেকে এর উপযোগী করে তুলবেন। কিন্তু আপনি বুঝিয়ে দিলেন, এই চেয়ারে বসার মতো যোগ্যতা সত্যিই আপনার নেই। গোটা ছাত্র সমাজ আপনার বিরুদ্ধে, চলচ্চিত্র মহলের অনেকেই প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন (কেউ কেউ শাসক দলকে চটাতে চান না বলে প্রকাশ্যে বলতে পারছেন না)। এরপরেও আপনার মনে হল না, সরে দাঁড়ানো উচিত ?

মনে পড়ে, মহাভারতে আপনি যুধিষ্ঠির হয়েছিলেন ? আপনাকে যে যেটুকু চেনে, তা ওই যুধিষ্ঠির সাজার জন্যই। সেই যুধিষ্ঠিরের সামান্য মূল্যবোধটুকুও থাকবে না ? যুধিষ্ঠির যদি বুঝতেন, প্রজারা তাঁর  বিরদ্ধে, তিনি রাজার আসনের জন্য এমন হ্যাংলামি করতেন ? এক বার চোখ বন্ধ করে ভাবুন।

গজেন্দ্র, কেউ চাইছে না, এই দেওয়াল লিখনটা পড়তে শিখুন। নাই বা হলেন বিখ্যাত অভিনেতা। নাই বা হলেন চিত্র পরিচালক। কোনও এক সময় মহাভারতে যুধিষ্ঠির তো হয়েছিলেন। সেই পরিচয়টাই না হয় মনে রাখব। পদ আঁকড়ে থাকা অযোগ্য চেয়ারম্যান হিসেবে আপনাকে মনে রাখতে চাই না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.