‌একটা স্মার্টফোন, কেড়ে নিচ্ছে এক পাতা পড়ার ধৈর্য

অভিজিৎ পাল

ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপকে ঘিরে রোজই কোনও না কোনও অঘটন লেগেই আছে। কখনও ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা। কখনও সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনা। নতুন নতুন প্রযুক্তি। দিয়েছে অনেককিছু। কিন্তু কেড়ে নিয়েছে বোধ হয় তার থেকেও বেশি কিছু।

আমার সন্তান সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। পড়ে তো লিখলাম, কতখানি পড়ে, জানি না। কারণ, এখন তাকে আর বই হাতে দেখি না। সারাক্ষণ মোবাইল হাতে কী সব যেন করে চলেছে। জিও সিম হাতে আসার পর থেকে এই নেশা আরও বেড়েছে। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। সারাক্ষণ খুটখাট করতেই থাকে। কী করে, জানি না। তবে এটুকু বুঝি, যা করছে, তার সঙ্গে ওর পড়াশোনার কোনও সম্পর্ক নেই।

লকডাউনের পর এটা যেন আরও বেশি করে মান্যতা পেয়ে গেছে। সবাই নাকি অনলাইন পড়াশোনায় ব্যস্ত। বইয়ে নাকি কিছুই থাকে না। সবকিছুই নাকি ওই মোবাইলে আছে। শিক্ষকরা নাকি অনলাইনেই থাকেন। নানা ব্যাপারে পড়ুয়ারা নাকি শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করেন। অনেক বাবা–‌মা এসব বিশ্বাস করেন। অন্যদের কাছে রীতিমতো বড়াই করে বলেন, তাঁর ছেলে বা মেয়ে অনলাইন ক্লাস করছে। কিন্তু একবার ভেবেও দেখেন না এই প্রজন্মের বড় একটা অংশ কীভাবে বাবা–‌মার মাথায় টুপি পরাচ্ছে। ওরা কি আমাদেরকে একেবারেই গাধা ভাবে!‌

মানছি, বয়সটাই খারাপ। এই বয়সেই অনেকে বখে যায়। পরে এই সময়টা আর ফিরে পাওয়া যায় না। ছেলেকে বারবার বুঝিয়েছি। কোনও ফল হয়নি। উল্টে রেগে যায়। দিন দিন প্রচণ্ড অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছে। পরিষ্কার বুঝতে পারছি, ওর পড়ায় মন নেই। বাথরুমেও যায় ফোন নিয়ে। খেতে বসে খাওয়ার দিকেও মন থাকে না। এতটাই অ্যাডিক্টেড হয়ে গেছে, এক মুহূর্তও ফোন ছাড়া থাকতে পারছে না। আমার মতো অনেকের ঘরেই হয়ত এই সমস্যা। যার প্রতিকার কী, জানি না।

বাংলাদেশের একটা খবর পড়ে কিছুটা আশা জেগেছিল। সেখানে নাকি রাত দশটার পর ফেসবুক নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। আপাতভাবে এটা গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ মনে হতে পারে। কিন্তু নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে আমার অন্তত মনে হয়, আমাদের দেশেও এই দাবি ওঠা উচিত। ছোট্ট একটা দেশ। নিজের মাতৃভাষাকে ভালবেসে প্রাণ দিয়েছে। মাতৃভাষাকে ভালবাসে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা আমাদের পথ দেখায়।

আমাদের দেশেও তো সেই এক সমস্যা। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে। অহেতুক রাত জাগছে। নিষিদ্ধ সম্পর্কে আসক্তি আসছে। কর্মসংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে। যাঁরা দেশ চালান, তাঁরা কি বুঝতে পারছেন না?‌ তাই, আমাদের দেশেও এই নিয়ম চালু হোক। রাত বারোটা নয়, রাত দশটা থেকে ফেসবুকের উৎপাত বন্ধ হোক।

জানি, অনেকের আপত্তি থাকবে। তাদের হয়ত কিছুটা অসুবিধাও হবে। কিন্তু বিরাট অংশের ছাত্র–‌যুবকে বাঁচানোর এছাড়া আর কোনও উপায় নেই। চোখের সামনে আস্ত একটা প্রজন্ম কেমন তলিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু দেখেও, সবকিছু জেনেও আমরা কেমন উদাসীন হয়ে আছি।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.