অমিত শাহ যথার্থই পাপ্পু

ওপেন ফোরাম

সৃজন শীল

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি একেবারেই পছন্দ করি না। হ্যাঁ, তিনি এই মুহূর্তে এই রাজ্যের দ্বিতীয় প্রভাবশালী মানু্ষ। তিনি বাংলা, হিন্দি, ইংরাজি— তিনটেই বেশ চমৎকার বলেন। কথাবার্তা বেশ গোছাল। সংগঠনকে একটা নতুন চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

হয়ত অনেক ইতিবাচক গুণই তাঁর আছে। তবু পছন্দ করি না। তার কারণটা নাই বা বললাম। সবাই জানেন। প্রমাণ না হলে সরাসরি অভিযোগ করা যায় না। কিন্তু কিছু অভিযোগ থাকে, যা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। তার আচরণ, তাঁর ঔদ্ধত্য বুঝিয়ে দেয় অভিযোগগুলো নেহাত ফেলনা নয়। তাছাড়া, প্রমাণ জোগাড় করা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরাই যদি প্রমাণ লোপাট করার দায়িত্ব নিয়ে ফেলেন, তাহলে প্রমাণ পাওয়া সহজ নয়।

যাই হোক, অন্য প্রসঙ্গে আসি। তাঁর একটি কথা আমার মনে বেশ দাগ কেটেছে। তিনি অমিত শাহকে বলেছেন দেশের সবথেকে বড় পাপ্পু।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র বিরোধী হয়েও অন্তত এই কথাটির জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। গত কয়েক বছর ধরে দেশের প্রধান বিরোধী দলের নেতাকে বরাবর ‘‌পাপ্পু’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আর সেই সম্বোধন এসেছে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে।

একজন প্রধানমন্ত্রী বিদেশ যাচ্ছেন। গিয়ে নিজের দেশ সম্পর্কে বিস্তর নিন্দেমন্দ করে চলেছেন। আগের প্রধানমন্ত্রীরা কেউ কোনও কাজের ছিলেন না। সবাই খুব খারাপ ছিলেন। একমাত্র তিনি এসে দেশের হাল ধরেছেন। এই জাতীয় একটা বার্তা দিতে চেয়েছেন। এর আগে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে এমনটা করতে দেখিনি।

এই একটা ব্যাপার থেকেই একটা মানুষের শিক্ষা, রুচি বোঝা যায়। কতটা নিম্মমানের মানুষ হলে বিদেশের মাটিতে গিয়ে নিজের পূর্বসুরিদের এভাবে ছোট করতে পারেন। কতটা নিম্নরুচির মানুষ হলে বিদেশে গিয়ে বিরোধীদের এভাবে কটাক্ষ করতে পারেন।

আর প্রধানমন্ত্রী যদি পাপ্পু ডাক দেন, তাহলে মিডিয়া সেল থেকে শুরু করে নির্বোধ ভক্তরা তো ঝাঁপিয়ে পড়বেনই। সেটাই হয়েছে।

অমিত শাহ সম্পর্কে বিরাট প্রচার, তিনি নাকি চানক্য। তাঁর ভূমিকাটা কী?‌ কেন্দ্রে থাকার সুবাদে ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করে বিরোধী দলের সরকারকে ভাঙা। এক দলের জয়ী বিধায়কদের প্রলোভন দেখিয়ে, ভয় দেখিয়ে নিজের দলে যোগ দেওয়ানো। অন্য রাজ্যে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রাখা। তারপর বিরোধীদের সরকারকে ফেলে দেওয়া।

এটা যে কোনও কৃতিত্বের বিষয় হতে পারে না, এই বোধটুকুও মূলস্রোত মিডিয়া হারিয়ে ফেলেছে। ফলে, যেটা নিন্দনীয়, যেটা ধিক্কার দেওয়ার মতো, সেটাকেও গ্লোরিফাই করে গেছে।

অথচ, তাঁর যেটা কাজ, সেটাই ভুলে গেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কাজ ছিল গরু পাচার, কয়লা পাচার আটকানো। আর তিনিই বলে চলেছেন, গরু পাচার হচ্ছে। অভিযোগের তীর ছুড়ছেন বিরোধীদের দিকে। নিজের ব্যর্থতাকে যে কেউ এভাবে ফলাও করে প্রচার করতে পারেন, এটা আগে জানা ছিল না। গত সাত–‌আট বছরে সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার যদি বেড়ে থাকে, তাহলে সেই লজ্জা কার?‌ এই বোধটুকুও নেই। একের পর এক তদন্তে সিবিআই চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সারদা মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। গরু পাচার থেকে কয়লা পাচার। তদন্তে গড়িমসির সুযোগ নিয়ে মূল অভিযুক্তরা বিদেশে ফেরার হয়ে গেল। আরেক মূল অভিযুক্তর নাম চার্জশিটেই দেওয়া গেল না। জেরা থেকে বেরিয়ে তিনি হুঙ্কার ঝাড়তে পারছেন, এটা কার অপদার্থতা।

হ্যাঁ, অমিত শাহ সত্যিই একটা আস্ত পাপ্পু। ধেড়ে নাবালক। অন্তত এটুকু বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য শ্রীমান ভাইপোর একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.