জোটের কথা কিনা গুরুং ঘোষণা করে দিলেন!‌

হেমন্ত রায়

কয়েকদিন ধরেই গুঞ্জনটা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল। বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে সমঝোতার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল। কিন্তু ঠিক বিশ্বাস হয়নি। যে বিমল গুরুংয়ের নামে প্রায় দেড়শো খানা কেস দেওয়া আছে, তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করেই বা কী লাভ?‌ পাহাড়ের তিনটে আসনে যদিও বা কিছু লাভ হয়, সমতলে তো নেতিবাচক বার্তা যাবে।

কিন্তু দেখা গেল, বিমল গুরুং হাজির হলেন। অন্য কোথাও নয়, সটান একেবারে কলকাতায়। রাজ্য পুলিশের সবুজ সঙ্কেত না পেলে এতবড় সাহস দেখাতেন!‌ প্রায় তিন বছর কার্যত নিরুদ্দেশ ছিলেন। মাঝে মাঝে বিবৃতি দিয়ে ভেসে থাকার চেষ্টা করতেন। কিন্তু কোথায় আছেন, কিছুই জানা যেত না। দেখা দিলেন, একেবারে কলকাতায়।

সহজ কথা, আগে থেকেই কথাবার্তা চূড়ান্ত ছিল। প্রশান্ত কিশোরের ফর্মুলা মেনেই কলকাতায় এসে এই সাংবাদিক সম্মেলন। কী কী আলোচনা হয়েছে, তা সঠিকভাবে জানা যাবে না। কিন্তু একটা আন্দাজ করা যেতেই পারে। ১)‌ আপনার বিরুদ্ধে সমস্ত মামলা তুলে নেওয়া হবে। ২)‌ পাহাড়ে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে। ৩)‌ সেখানে রাজনীতি করার অধিকার থাকবে। ৪)‌ জিটিএ মারফত নানা সুবিধা দেওয়া হবে। ৫)‌ আবার জিটিএ–‌র হারানো কর্তৃত্ব ফিরিয়েও দেওয়া হতে পারে।

বিনিময়ে বিমলকে কী কী করতে হবে?‌ ১)‌ কলকাতায় এসে ঘোষণা করতে হবে, এনডিএ ছাড়লাম। ২)‌ মমতার নেতৃত্বে আস্থা জানাতে হবে। ৩)‌ বিধানসভায় তৃণমূলের প্রার্থীর হয়ে লড়াই করতে হবে। ৪)‌ রাজ্যের সঙ্গে অহেতুক বিবাদে যাওয়া চলবে না।

bimal gurung4

তাঁর সঙ্গে কি তৃণমূল জোট করবে?‌ না করে উপায় নেই। শুধু পাহাড়ের তিনটে আসন নয়। ডুয়ার্সের কয়েকটা আসন মোর্চার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। সেখানে নেপালি ভোট কোন দিকে যাচ্ছে, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে। তার চেয়েও বড় কথা, বিমল গুরুংয়ের মতো বিদ্রোহী নেতাকে যদি বশ্যতা স্বীকার করানো যায়, গোটা রাজ্যেই একটা অন্যরকম বার্তা যাবে। বিজেপি–‌র সেই হাওয়া আর নেই। যারা গিয়েছিল, তারা ফিরে আসছে। এই বার্তাটা ছড়িয়ে গেলে জেলায় জেলায় দলের ভাঙন কিছুটা হলেও আটকানো যাবে।

তৃণমূল জোট করবে কিনা, আগে থেকে জানাল না। প্রকাশ্যে আগ্রহ দেখাল না। বিমল গুরুং কিনা জোটের কথা ঘোষণা করে দিলেন। অর্থাৎ, জোট হওয়া, না হওয়াটা যতটা তৃণমূলের ইচ্ছা, তার থেকেও বেশি বোধ হয় গুরুংয়ে সম্মতির ওপর নির্ভরশীল।

তিনি বললেন, যারা আলাদা রাজ্যের দাবিকে সমর্থন জানাবে, তাদের সঙ্গে থাকব। তারপরই বললেন, মমতা ব্যানার্জিকে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য লড়াই করব। এই দুটো লাইনকে একসঙ্গে জুড়লে কী মানে দাঁড়ায়?‌ তবে কি আলাদা রাজ্যের ব্যাপারে কোথাও একটা সবুজ সঙ্কেত পেয়েছেন?‌ দু তরফের এ ব্যাপারে অবস্থান স্পষ্ট করা খুব জরুরি। কিন্তু নিশ্চিত থাকতে পারেন, দু পক্ষই এ ব্যাপারে ধোঁয়াশার আশ্রয় নেবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.