দিলীপ ঘোষরা কেউ নন। এমনকী শিবপ্রকাশ–বিজয়বর্গীরাও কেউ নন। মুকুল রায়কে বিজেপিতে নেওয়া বা না–নেওয়া এঁদের কারও ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে না। কথা হয়েছে অনেক উপরের স্তরে, অনেক আগে। নিশ্চিত না হলে মুকুল দল ছাড়ার ঝুঁকি নিতেন না। লিখেছেন রজত সেনগুপ্ত।।
মুকুল রায়কে সবুজ সংকেত দিলেন বিজয়বর্গী। প্রায় সব কাগজেই এই জাতীয় শিরোনাম। যেন এতদিন ব্যাপারটা আটকে ছিল। যেন মুকুল বিজেপি–তে আসবেন কিনা, তা বিজয়বর্গীদের সংকেতের অপেক্ষায় ছিল।
মুকুল রায় যখন দল ছাড়ার কথা বলেছেন, তখন নিশ্চিত থাকতে পারেন, অনেক আগে থেকেই পরের তিন–চারটে ধাপ তিনি ভেবে ফেলেছেন। কংগ্রেসে যাওয়ার দরজা বন্ধ। বিজেপির থেকে নিশ্চিত আশ্বাস না পেয়ে তিনি দল ছাড়ার ঝুঁকি নিলেন? তাঁকে এতখানি বোকা বলে মনে হয়?
রাজ্য বিজেপি–র তাঁকে নিয়ে দ্বিধা থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। মুকুল রায় বিজেপি–তে এলে দিলীপ ঘোষদের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা অনেকটাই কমে যাবে, এটা বাচ্চা ছেলেও বোঝে। দিল্লিও গুরুত্ব দেবে সেই মুকুলকেই। এমনকী জেলা নেতৃত্বও মুকুলের নির্দেশেই চলবেন।
সমস্যাটা হবে অন্য জায়গায়। প্রায় সব ব্লকেই অনেক বিক্ষুব্ধ তৃণমূলি ভিড় জমাবেন মুকুল শিবিরে। তখন আদি বিজেপি বনাম নব বিজেপি সংঘাতটা মারাত্মক আকার ধারণ করবে। ব্লকে ব্লকে সেই বিতর্ক, সেই বিরোধ কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি, মুকুলকে একবার নেওয়া হলে সারদা–নারদার তাসটা হাত থেকে বেরিয়ে যাবে। এই নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করাই যাবে না। এমনকি সিবিআই আরও ঝিমিয়ে যাবে। আর সিবিআই শীত ঘুমে থাকলে ভোটের বাক্সে বিজেপি–র বিশেষ সুবিধাও হবে না।
সবকিছুই মুকুল নিজেও জানেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও জানেন। তা সত্বেও মুকুলের সামনে আপাতত কোনও বিকল্প নেই। অমিত শাহদেরও মুকুলকে নিতে হবে। তাহলে এই ধোঁয়াশা কেন? আসলে, আগাম ঘোষণা করলে চমক থাকবে না। দলের কর্মীদের কাছে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। তাই একটু জল মাপার চেষ্টা। কাগজের শিরোনাম যাই হোক, টিভির বিশ্লেষণ যাই হোক, মুকুল বিজেপি–তে যাচ্ছেন। আর এর জন্য যা যা সবুজ সংকেত লাগে, তা আজ নয়, অনেক আগেই নেওয়া হয়ে গেছে।