ভুলে যাবেন না, আপনি সৌমিত্র

নন্দ ঘোষের কড়চা

nanda ghosh logo
লোকে বলে, বুড়ো বয়সে লোকের ভীমরতি হয়। ভীমরতি জিনিসটা কী? সেটা হলে কী কী উপসর্গ দেখা দেয়? তা জানি না। এই যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বুড়ো বয়সে ফেসবুক খুললেন এটা কি ভীমরতির লক্ষণ?

আচ্ছা সৌমিত্রবাবু, ফেসবুক খুলে মানুষ যা যা করে, আপনার কি সেই সব করার বয়স আর আছে? যখন বয়স ছিল তখন এইসব কাজ আপনি করেননি। মেয়েদের পিছনে ঘুরঘুর করছেন, সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে নিজের ঢাক নিজে পেটাচ্ছেন, আর পেটাতে গিয়ে লোক হাসাচ্ছেন, এইসব অপবাদ আপনার নামে কেউ কখনও দেয়নি।

তাহলে এখন এই বয়সে এসে, ফেসবুক খুললেন কেন? ফেসবুক খুলে কী করবেন? “হাঁটুতে জিলাক্সো লাগালাম, feeling happy. ” “কাল রাতে লিভাগড খেয়েছিলাম। আজ সকালে সব কিছু ঠিকঠাক হল। good morning.” এই সব হাস্যকর পোস্ট করবেন? আর মিনিটে মিনিটে দেখবেন, কটা লাইক পড়ল?

soumitra

টলিউড বা বলিউডের তারকারা ফেসবুক, হোয়াটস্যাপে কী করে আপনি জানেন না? সধারণ মানুষ যা করে তাই করেন। পরস্পরের পিঠ চুলকান আর আত্মপ্রচার করেন। অমিতাভের মতো মানুষ এইসবের খপ্পরে পড়ে নিজেকে কপিল শর্মার পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন। প্রতিদিন প্রতি বিষয়ে বোকা বোকা লেখা লিখছেন আর পিতার সুনামে কালি ছেটাচ্ছেন। তাও অমিতাভের ব্যাপারটা মানা যায়। কারণ তিনি নিজে কবি বা বুদ্ধিজীবী নন। কিন্তু আপনি না কবি? বুদ্ধিজীবী? আপনি না সংস্কৃতি মনস্ক? আপনি না পত্রিকার সম্পাদক? আপনিও এই সস্তা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসালেন?

টলিউডের তারকারা কে কোন সিনেমায় অভিনয় করল, কে কোন অনুষ্ঠানে গেল তার ছবি পোস্ট করে। আপনি কী করবেন? পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফাল্‌কে, লিজিওন দ্য নর প্রভৃতি পুস্কার পাওয়ার ছবিগুলো নতুন করে পোস্ট করবেন? “রাজ চক্রবর্তীর ছবিতে চান্স পেলুম। thank you Raj” লিখে সবার শুভেচ্ছা কামনা করবেন? মন্ত্রীর পাড়ায় খুঁটি পূজায় হাজিরা দেবেন? প্রযোজকদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাবেন? নাকি দেজ পাবলিশার্স থেকে আপনার শ্রেষ্ঠ কবিতার বই বেরনোর পরেও ফেসবুকে কবিতা লিখবেন? নাকি রূপ–‌গুণের প্রশংসা শুনে শুনে পেট ভরেনি? প্রতি মুহূর্তে “looking handsome” মার্কা কমেন্ট দেখতে চান?

উত্তমকুমার নাকি আপনাকে উপদেশ দিয়েছিলেন, তারকাসুলভ জীবনযাপন করতে। আপনি শোনেননি। আপনি সাধারণের মতোই থাকতে চেয়েছিলেন। আজ মনে হচ্ছে সেই উপদেশ শুনলেই ভালো করতেন। উত্তমকুমার বেঁচে থাকলে কক্ষনো ফেসবুক করতেন না। বলতেন, এত সহজে আমাকে পাওয়া যাবে না। উত্তমকুমারের কথা শোনেননি, শুনলেন প্রসেনজিতের কথা। কাগজে পড়লাম তাঁর বুদ্ধিতেই ফেসবুক খুলেছেন।

মুখে যাই বলুন, মনে মনে তো জানেন, উত্তম আর প্রসেনজিতের তফাৎ ঠিক কতটা। কাজেই আপনিই ভাবুন, কার পরামর্শ শোনা উচিত। ফেসবুক করতে গিয়ে ঋতব্রতর কী হাল হল দেখুন, আর অবিলম্বে ওই সব কাজ বন্ধ করুন। মনে রাখবেন এই বয়সেও আপনি ঋতব্রতর থেকে অনেক বেশি সুপুরুষ।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.