সুমিত চক্রবর্তী
বাঙালির মন খারাপ। পাহাড় বলতেই বাঙালি ছুটে যেত দার্জিলিংয়ে। কিন্তু গুরুংবাবুদের দাপটে আপাতত সেই ভাবনা শিকেয় তুলে রাখতে হচ্ছে। পাহাড়ে বনধ শুরু হয়ে গেল। কবে যে বনধ উঠবে, কে জানে! উঠলেও আবার যে কোনওদিন, যে কোনও অজুহাতে বনধ আসতেই পারে। তাই ছাপোষা বাঙালি নিশ্চয় এই ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে উঠতে চাইবেন না।
একদিক দিয়ে ভালই হল। বাঙালি দার্জিলিং বলতে দার্জিলিংয়ের বাইরে কিছু বুঝলই না। এবার যদি সেসব দিকে চোখ পড়ে! কার্শিয়াং ও কালিম্পংকে ঘিরে কত ভাল ভাল জায়গা আছে। সব জায়গায় হয়ত বাজার নেই। শপিং মল নেই। ঘনঘন গাড়ি ঘোড়া নেই। চাইনিজ রেস্তোরাঁ নেই। শহুরে আমেজটা নেই। কিন্তু আপনি তো যাচ্ছেন পাহাড় ঘুরতে। তাহলে সেই অচেনা জায়গাগুলো ঘুরতে অসুবিধে কোথায়? এখানে তো বিমল গুরুংয়ের দল উৎপাত করতে আসছে না। এখানে রাজ্য বা ভাষা নিয়ে কোনও হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনও নেই। এখানে টিভি ক্যামেরাও নেই। তাই গাড়ি জ্বলার ঘটনাও নেই।
দার্জিলিং যতই উত্তপ্ত হোক, পাহাড়ের বিরাট অংশ এখনও শান্তই আছে। সেইসব গ্রামে গেলে কোনও সমস্যায় পড়বেন বলে মনেও হয় না। সেই সহজ সরল মানুষগুলোর আতিথেয়তা ও আন্তরিকতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তাঁরা সেদিনও হাসিমুখে পর্যটকদের বরণ করেছেন, আজও করবেন। কত অজানা গ্রাম, যেতে ইচ্ছে করে না! প্রকৃতি যেন দু হাত ভরে সাজিয়ে দিয়েছে! পাইনের মাঝখান দিয়ে মেঘ ভেসে আসছে। আপনার চারপাশে ওই মেঘের বৃত্ত। খেয়ালমতো বৃষ্টি আসছে, থেমেও যাচ্ছে। ওই উঁচু উঁচু গাছগুলোর ভেতর থেকে কখনও রোদ ঝিকমিক করে উঠছে। মনে হবে, ধুর নিকুচি করেছে দার্জিলিংয়ের। আসল পাহাড় তো এটাই।
এমন কত গ্রাম, কত অজানা জনপদ। থাকার সুদৃশ্য হোটেল হয়ত নেই। দারুণ আন্তরিকতা ও আতিথয়েতা নিয়ে হোম স্টে তো আছে। চাইলে এমন পঁচিশটা জায়গার হিদশ দেওয়াই যায়। ঠিকানা বা ফোন নম্বরও দেওয়া যায়। চাইলেই সেগুলো নেট থেকে বা ফেসবুকের বিভিন্ন ভ্রমণ গ্রুপ থেকে পেয়ে যাবেন। আগে ঠিক করুন, আপনি পাহাড়ে যাবেন কিনা। এটুকু বলতে পারি, যেতে চাইলে, জায়গার অভাব নেই। একটু খোঁজ নিন, ঘুরে আসুন। গুরুংরা যতই বনধ ডাকুক, পাইনের ফাঁক দিয়ে মেঘ ঠিক ভেসে বেড়াবে।
(বেঙ্গল টাইমসে ভ্রমণ বরাবরই বাড়তি গুরুত্ব পায়। ভ্রমণ মানে শুধু ভ্রমণ কাহিনী নয়, শুধু কয়েকটা জায়গার বিবরণ নয়। তার বাইরেও অনেক কিছু। সেই বৃত্তে আপনিও স্বাগত। বেড়ানো সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বা পরামর্শও তুলে ধরতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)