Categories খেলা

আমাদের ক্লাবগুলো অন্তত ম্যাঞ্চেস্টারের মতো বেআক্কেলে নয়

সরোজ চক্রবর্তী

কোন সময় কোনটা করতে হয়, সেটা জানা জরুরি। আবার উল্টোটা বোধ হয় আরও বেশি সত্যি। মানে, কোন সময় কোনটা করতে নেই, সেটা জানা আরও জরুরি।

কিন্তু বিশ্বকাপের আগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আর ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে, এই সহজ নিয়মটাই তাঁরা ভুলে গেছেন। বিশ্বকাপের আগে একজন ফুটবলার ক্লাবের তিক্ততা ভুলে বিশ্বকাপে ফোকাস করবেন, এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে, ক্লাবের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?‌ তাদের ক্লাবের খেলোয়াড় নিজের দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলছেন। তিনি যেন নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে পারেন, সেটাই চাওয়া উচিত।

কিন্তু দুই পক্ষই হাঁটছেন উল্টো পথে। রোনাল্ডো সম্পূর্ণ অযাচিতভাবেই টেনে আনলেন ক্লাব নিয়ে তাঁর একগুচ্ছ অভিযোগ ও অভিমানের কথা। এখানেই শেষ নয়, এমন কিছু বলে বসলেন, যা তিক্ততা বাড়িয়ে তোলার পক্ষে যথেষ্ট। বলে বসলেন, ম্যাঞ্চেস্টারের কোচ সম্পর্কে তাঁর মনে কোনও শ্রদ্ধা নেই।

অন্যদিকে, ক্লাব কী করল?‌ বিশ্বকাপে রোনাল্ডো নামার ঠিক আগে ঘোষণা করে দিল, রোনাল্ডোর সঙ্গে তাঁদের আর কোনও সম্পর্ক নেই।

রোনাল্ডো আর ম্যাঞ্চেস্টারের সম্পর্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছিল, যেখান থেকে আর হয়ত মেরামত করা সম্ভব ছিল না। ম্যান ইউর জার্সি গায়ে রোনাল্ডো আর খেলতেন না, এই দেওয়াল লিখন মোটামুটি পরিষ্কারই ছিল। কিন্তু এটা প্রকাশ্যে ঘোষণা করার আর সময় পেলেন না ম্যাঞ্চেস্টার কর্তারা?‌ বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগেই এমনটা ঘোষণা করতে হবে?‌ আর কটা দিন অপেক্ষা করা গেল না?‌

ম্যান ইউ কর্তারা একবার ভেবেও দেখলেন না, এই সিদ্ধান্তে রোনাল্ডোর ওপর কতটা প্রভাব পড়বে!‌ বিশ্বকাপ খেলতে নামার ঠিক আগে একজন খেলোয়াড় যদি জানেন, তাঁর ক্লাব তাঁকে ছেঁটে ফেলল, তাহলে তাঁর মানসিক অবস্থা কেমন হয়!‌ তাঁর মনের ওপর দিয়ে কতটা ঝড় বয়ে যায়!‌ এই অবস্থায় তিনি দেশের হয়ে ফোকাস করতে পারবেন?‌

রোনাল্ডো আগেও ম্যান ইউর জার্সি গায়ে দীর্ঘদিন খেলেছেন। দ্বিতীয় দফায় আবার খেললেন। তাঁর প্রতি ম্যাঞ্চেস্টারের কোনও দায়িত্ব নেই!‌ রোনাল্ডো না হয় সাক্ষাৎকারে কিছু বিতর্কিত কথা বলেছেন, এই সময়ে সেটাকে উপেক্ষা করা যেত না?‌ এখনই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হত?‌ কদিন পরে এই বিচ্ছেদ হলে কি খুব মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত!‌

এইসব ক্লাব নাকি পেশাদার। তাঁরা নাকি আধুনিক ভাবনা চিন্তার শরিক। এই যদি আধুনিক ভাবনা চিন্তার নজির হয়, এই যদি পেশাদারিত্বের নমুনা হয়, তাহলে বলতে হয়, আমরা মান্ধাতার আমলে পড়ে থাকলেও বেশ আছি। আমাদের ক্লাবগুলো যতই পিছিয়ে থাক, তাঁরা অন্তত বিশ্বকাপের আগে এমন বেআক্কেলে কাণ্ড করত না।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.