সরল বিশ্বাস
রাজনীতিতেও অনেক কিছু চিত্রনাট্য মেনেই হয়।
১) বিনয় তামাংরা আসবেন।
২) জিএনএলএফ, জাপ আসবে।
৩) তাঁরা গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলবেন।
৪) সরকার রাজি হবে না, তবে শুনবে।
৫) সরকার বন্ধ তোলার আর্জি জানাবে।
৬) পাহাড়ের দলগুলি আলোচনার জন্য সময় চাইবে।
৭) সরকার সময় দেবে।
৮) ফিরে গিয়ে কার্শিয়াংয়ে পাহাড়ের দলগুলি সভা করবে।
৯) সেই সভায় পুলিশ নিরাপত্তা দেবে, সরকার যতটা সম্ভব সাহায্য করবে।
১০) সভা থেকে বন্ধ তোলার ঘোষণা হবে।
১১) বিমল গুরুংদের চড়া সমালোচনা করা হবে।
১২) বিমল গুরুং নয়, বিনয় তামাংকেই মোর্চার মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হবে।
যা কিছু হয়েছে, চিত্রনাট্য মেনেই হয়েছে। ফলে মোর্চায় ভাঙনটাও ধরানো গেছে। বিনয় তামাংরা মোটেই নিজেরা সিদ্ধান্ত নেননি। যা সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে, সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।
কার্শিয়াংয়ের এই সভা নাকি ঐতিহাসিক সভা। বিনয় তামাংদের এই সভায় লোক কেমন হয়েছে? টিভিতে দেখে যা বোঝা গেল, শতরূপ ঘোষের পথসভাতেও এর থেকে বেশি লোক হয়। যতই বিনয় তামাংকে বিকল্প নেতা হিসেবে তুলে ধরা হোক, মূলস্রোত বাংলা কাগজে যতই ‘পাহাড়ের রাশ বিনয়ের হাতে’ এই সুরে হেডিং হোক, কয়েকদিন গেলেই বোঝা যাবে, আসল ছবিটা কী।
চিত্রনাট্যের এই পর্যন্ত মিলেছে। পরেরটুকু নাও মিলতে পারে। বিনয় তামাং কখনই বিমল গুরুংয়ের বিকল্প হতে পারেন না। ঠিক যেমন ববি হাকিম বা অরূপ বিশ্বাসরা কোনও দিন মমতা ব্যানার্জির বিকল্প হতে পারেন না। মমতার ছায়ার বাইরে গিয়ে তাঁরা কেউ নিজের ওয়ার্ডেও জিততে পারবেন না। ঠিক তেমনি বিমল গুরুংকে বাদ দিয়ে বিনয় তামাংও কোনও ছাপ ফেলতেই পারবেন না।
বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য সরকারের গ্যাস খেয়ে হরকা বাহাদুর ছেত্রির মতো মানুষও আলাদা দল গড়ে ফেলেছিলেন। ফল কী হল? কালিম্পংয়ে শোচনীয় পরাজয় হল। হরকা বাহাদুরকেও বিমল গুরুংয়ের বিকল্প মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছিল। সেই উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই চিত্রনাট্যটাও ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে।
হ্যাঁ, কথা শুরু হওয়া দরকার ছিল। শান্তি ফেরাতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়াও দরকার। জীবনের শেষ সীমান্তে এসে সুবাস ঘিসিংয়ের যে পরিণতি হয়েছিল, একদিন বিমল গুরুংয়েরও সেই পরিণতিই হবে। তাঁকেও একদিন পাহাড় ছাড়তে হবে। তবে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো লোক অন্তত বিনয় তামাং নন। তিনি যতই বন্ধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা করুন, দার্জিংলিয়ে বন্ধ তোলার ক্ষমতা তাঁর নেই। সেখানে অন্তত এখনও, গুরুং যা চাইবেন, তাই হবে।
কয়েকদিন যেতে দিন। বিনয় তামাংরাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবেন। এমনকী বিনয় তামাং নিজে দার্জিলিংয়ে উঠতে পারবেন কিনা, সেটা নিয়েও সংশয় আছে। দ্রুত রাজ্য সরকারের ভুল ভাঙবে। এমনকী যে বিনয় তামাং হাওয়ায় ভাসছেন, তিনিও টের পাবেন, বাস্তবের রুক্ষ মাটিটা কতটা শক্ত।