ছিন্নমস্তার আনন্দযজ্ঞে আপনারও নিমন্ত্রণ

 বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদনঃ একসঙ্গে তিরিশ হাজার মানুষ খিচুড়ি খাচ্ছেন! একবেলা নয়, দু’বেলা। একদিন নয়, টানা পাঁচদিন।পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে দামোদর। ছিন্নস্তার মন্দিরে চলেছে পূজা-আরতি।

কলকাতার যাত্রা থেকে পুরলিয়ার ছৌনাচ, বীরভূমের বাউল থেকে কীর্তন। নানারকম নাগরদোলা থেকে খাবারের নানা স্টল, মেলার নানা অনিবার্য উপাদান তো আছেই।

একসঙ্গে এতকিছু দেখতে হলে আপনাকে আসতেই হবে ছিন্নমস্তা মহোৎসবে। খুব দূরে নয়, ডিসেরগড়ে। ট্রেনে বরাকর বা আসানসোলে নেমে অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারেন ডিসেরগড় ঘাটে। আর কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে না। কাতারে কাতারে হেঁটে চলেছে মানুষ। আপনি শুধু তাঁদের সঙ্গে মিশে যান। পায়ে পায়ে ঠিক পৌঁছে যাবেন এই অভিনব মেলার আসরে। সব পথ এসে যে এখানেই মিশেছে।

বছরের পর বছর এই কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন যিনি, তিনি মানিকলাল আচার্য। এই এলাকার তিনবারের প্রাক্তন বিধায়ক। তবে এখানে এলে মনে হবে, ওটা তাঁর কোনও পরিচয়ই নয়। কোনও দল বা মতের বেড়াজাল নেই। কোনও দলীয় গন্ডিতে বা পরিচয়ে তাঁকে সীমাবদ্ধ রাখাও যাবে না। তিনি এই বিশাল কর্মযজ্ঞের নিরাসক্ত পুরোহিত।

???????????????????????????????

প্রতিবছর শীতের সময় এই মেলাকে ঘিরেই জমজমাট হয়ে ওঠে শিল্পাঞ্চল। এই সাঁকতোড়িয়াতেই ই সি এলের সদর দপ্তর। আশেপাশে বিভিন্ন কয়লাখনি। মাটির তলায় যেখানে রত্নভান্ডার। দেশের নানাপ্রান্তের মানুষ কর্মসূত্রে এখানকার বাসিন্দা। নদীর একদিকে পুরুলিয়া, একদিকে বর্ধমান। নদীই হয়ে উঠেছে সীমারেখা। আবার এই নদীই যেন একসূত্রে বেঁধে রেখেছে দুটি জেলাকে। ওপারে গেলে গড় পঞ্চকোট, আর এদিকে ছিন্নমস্তা।

আর এই ছিন্নস্তাকেই যেন অন্য এক মাত্রা এনে দিয়েছে ছিন্নমস্তা মহোৎসব। এবার তা শুরু হচ্ছে ২ ফেব্রুয়ারি।তখনও হালকা শীত থাকবে। ফলে শীতের রোদ গায়ে মেখে মেলা ঘুরতে ভালই লাগবে। মানিকবাবু তো আছেনই। উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন  অনেক কর্মযোগী মানুষ। অজিত পাণ্ডের কণ্ঠে অমরত্ব পাওয়া সেই চাষনালার গানের কথা মনে পড়ে ? সেই গানের স্রষ্টা কবি নন্দদুলাল আচার্যকে পেয়ে যাবেন মেলা চত্ত্বরে। প্রায় চার দশক ধরে কলকাতার সাহিত্যজগতকে যিনি টেনে এনেছেন শিল্পাঞ্চলে। হাসিমুখে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন নন্দবাবু।

সেই সকাল থেকে শুরু হয়ে যায় কর্মযজ্ঞ। যত বেলা বাড়ে, ততই বাড়ে লোক সমাগম। আর বিকেল হতে না হতে তা নেয় জনসমুদ্রের চেহারা। শুধু আশেপাশের জনপদ নয়, পাশেই থাকা ঝাড়খন্ড থেকেও কাতারে কাতারে আসছেন মানুষ। কেউ মানত রেখেছিলেন। কেউ নদীর জলে স্নান করছেন। কেউ নানা স্টলে ঢু মেরে এটা সেটা খেয়েই চলেছেন। কেউ মনের সুখে সব নাগরদোলায় একবার করে চড়ে বসছেন। কেউ মেলার নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে চলেছেন। আর খিচুড়ির মহাভোজ তো আছেই।

chhinnamasta3

রাজ্যের নানাপ্রান্তে যেন মেলার ছড়াছড়ি। সরকারি উদ্যোগে অবলা থেকে সবলা, ঘটি থেকে মাটি, কুখাদ্য থেকে সুখাদ্য, কতরকমের মেলা।  ছোটখাটো মেলাও কত প্রচার পেয়ে যায়। টিভিতে লাইভ টেলিকাস্ট দেখা যায়। অথচ, ঐতিহ্যে ও ব্যপ্তিতে এই মেলার ধারেকাছেও আসে না মহানগরের সেইসব হঠাৎ গজিয়ে ওঠা মেলা। এখানে প্রচারের জন্য কাগজ বা চ্যানেল লাগে না। ফেসবুক ক্যাম্পেনও লাগে না। মুখে মুখে ছড়িয়ে যায়। প্রাণে প্রাণে ছড়িয়ে যায়।

একটু ছুটি পেলে একবার ঘুরেই আসুন না, ভাল লাগবে । ভাল লাগবেই। কলকাতার উপকণ্ঠ থেকে অনেকটা দূরে, সীমান্তের এই মেলা কীভাবে দুটো জেলাকে, দুটো রাজ্যকে মিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে! এই আনন্দযজ্ঞে আপনারও নিমন্ত্রণ রইল।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.