গণপিটুনি! আইনের পেছনে অন্য উদ্দেশ্য নেই তো!

ওপেন ফোরাম

open forum3

গণপিটুনি রুখতে বিশেষ আইন আনার ভাবনা। সেই ভাবনা থেকে বিধানসভায় বিলও আনা হল। সেই বিষয় নিয়ে ওপেন ফোরামে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরতে চাই।

প্রথমেই আসি জবাবি ভাষণে। মুখ্যমন্ত্রী বলে গেলেন, বিজেপি সবার বিরুদ্ধে লেগেছে। সিপিএমের কাউকে সিবিআই ডাকছে না। সিপিএমের সঙ্গে বিজেপির কোনও গোপন বোঝাপড়া আছে। সিপিএমের সময়েই সব চিটফান্ড তৈরি হয়েছে। আমরা কাশ্মীর থেকে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছি। বুঝতে পারলাম না, গণপিটুনি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সেখানে সিবিআই বা চিটফান্ডের কথা এল কেন ? এমন আবোল তাবোল কথা কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে মানায়! বরাবরই প্রসঙ্গ ছাড়িয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যান। কীসব বলেন, তার কোনও মাথামুণ্ড থাকে না। সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে।

এবার অন্য বিষয়ে আসি। গণপিটুনি কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু গণপিটুনির পেছনে পুলিশের ব্যর্থতা ও বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রিতা বড় একটা কারণ। পুলিশ যদি নানা বিষয় তৎপর হত, তাহলে হয়ত মানুষ নিজের হাতে এভাবে আইন তুলে নিত না। প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা থেকেই মানুষ আইন হাতে তুলে নেয়। তাই, নতুন বিল আনার আগে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নিতে হবে।

bidhan sabha

বিচার বিভাগের নিষ্ক্রিয়তাও বড় একটা কারণ। সবাই জেনেই গেছে, পুলিশে দিলেও কিছু হবে না। পুলিশ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেবে। আর যদি কেস দিয়েও থাকে, আদালত থেকে ঠিক জামিন পেয়ে যাবে। এর বিচার কখনই হবে না। তাই বিচার বিভাগেরও আত্মসমীক্ষা করা প্রয়োজন।

আরও একটা বিষয়। এই আইনের প্রয়োগে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিষয় যখন গণপিটুনি, তখন তো অনেকেই যুক্ত। ধরা যাক, কুড়ি পচিশজন সেই পিটুনিতে জড়িয়ে। সবাইকে ফাঁসি দেওয়া সম্ভব? কোনওদিন তা কার্যকর হবে? কেউ হয়ত এক লাথি মেরেছে। কেউ হয়ত পাশে দাঁড়িয়ে মজা দেখেছে। কীভাবে পরিমাপ হবে? স্থানীয় লোকেরা সাক্ষী দেবেন তো ?

আরও একটা বড় অপব্যবহার দেখা যেতে পারে। ধরা যাক, বিজেপি—তৃণমূল রাজনৈতিক ঝামেলা। কোনও এক তৃণমূল নেতা আক্রান্ত হলেন, তখন বিরোধীদের নামে এই সব গণপিটুনির কেস দেওয়া হবে না তো ? রাজনৈতিক হানাহানির ক্ষেত্রে এই আইনের অপব্যবহার হবে না তো ? রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ব্যাপারে সরকার কতটা নিচে নামতে পারে, আজ্ঞাবহ পুলিশ কতটা মিথ্যে মামলা দিতে পারে, গত কয়েকবছরে তার শতাধিক নমুনা আছে। সর্বোচ্চ স্তর থেকেই সেই প্রতিহিংসার নির্দেশ দেখা যায়। সেই কারণেই আশঙ্কা আরও বেশি। বেঙ্গল টাইমসে সেই সংশয়ের কথা নথিবদ্ধ করে রাখলাম।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.