রক্তিম মিত্র
আবার সেই প্রশাসনিক সভা। আবার সেই অফিসারদের লোক দেখানো ধমক। সেই চেনা চিত্রনাট্য। শুধু জায়গাগুলো বদলে যায়। কোনওবার ঝাড়গ্রাম, কোনওবার বারুইপুর, কোনওবার বালুরঘাট, কোনওবার কোচবিহার।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, কেন সাবেক ছিটমহলবাসীদের সমস্যার সমাধান হয়নি? কেন অর্ডিনান্স আনা হচ্ছে না? কেন অ্যামেন্ডমেন্ট করা হচ্ছে না? সব কাজই কি আমাকে করতে হবে?
অনেক দিন হয়ে গেল দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হয়েছে। সাবেক ছিটমহল বাসীরা এখন ভারতের নাগরিক। কিন্তু নাগরিক পরিষেবার ব্যাপারে অভিযোগের শেষ নেই। রাস্তা, স্কুল, হাসপাতাল, পানীয় জল, রেশন কার্ড— এমন হাজারো সমস্যা। অন্তত একশোবার বিভিন্ন কাগজে এই সমস্যার কথা বেরিয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন নানা স্তরে অসংখ্য ডেপুটেশন দিয়েছে। কিন্তু কোনওকিছুই মুখ্যমন্ত্রীর নজরে পড়েনি। চাইলে, এই সমস্যাগুলো কলকাতায় বসেই সমাধান করা যেত। কিন্তু প্রশাসনিক সভার চিত্রনাট্যটা যে তাহলে জমবে না।
টিভিতে দেখাচ্ছে। কাগজের লোকেরা আছে। এটাই তো আসল সময়। অফিসারদের ভর্ৎসনা করা যাক। বুঝিয়ে দেওয়া যাক, আমি কাউকে রেয়াত করি না। বুঝিয়ে দেওয়া যাক, ছিটমহলবাসীদের নিয়ে আমি কত চিন্তিত। বুঝিয়ে দেওয়া যাক, আমি জানতে পারলেই চটপট সমাধান করে ফেলি। এই বার্তাগুলো দেওয়া খুব জরুরি। তার জন্য যদি অফিসারদের হেনস্থা হয়, মন্দ কী? তার জন্য যদি দলের বাকি নেতা–মন্ত্রীরা অযোগ্য, এই বার্তা যায়, মন্দ কী?
আসলে, প্রতিটি প্রশাসনিক সভা হল এক সস্তা রুচির নাটক। সমস্যা সমাধানের সদিচ্ছা আদৌ কতখানি আছে, প্রশ্ন থেকেই যায়। মুখ্যমন্ত্রী জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, এ তো ভাল কথা। কিন্তু এটার মধ্যে এতখানি লোকদেখানো ব্যাপার থাকবে কেন? সমস্যার সমাধান নয়,নিজেকে পরিত্রাতা হিসেবে তুলে ধরার তাগিদটাই যেন বেশি। বাকি সবাই অযোগ্য, একমাত্র আমি আছি বলেই রাজ্যটা চলছে, এই বার্তাটাই যেন বড় বেশি করে ফুটে ওঠে। কী জানি, মুখ্যমন্ত্রী হয়ত সেই ছবিটাই তুলে ধরতে চান।