সরল বিশ্বাস
বিনয় ভাই,
আগেও তোমাকে এই নামেই ডাকতাম। অনেকদিন দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। তবে মাঝে মাঝেই টিভিতে তোমার কথা শুনি। কাগজ পড়ায় কোনও কালেই তেমন আগ্রহ নেই। তবু মাঝে মাঝে ওল্টাতে হয়। সেখানেও তোমার নানা ভাষণ ছাপা হয়।
তোমাকে বিজয়ার শুভেচ্ছা। দীপাবলির আগাম শুভেচ্ছা। শুনলাম, এবার খুব ধুমধাম করে ম্যালে দুর্গাপুজো করেছো। সত্যিই, তাঁকে খুশি রাখতে কতকিছুই করতে হয়। তোমার লোকেরা মাঝে মাঝেই বলছে জিটিএ ভোট চাই। কখনও বলছে, লোকসভায় মোর্চা নাকি পাহাড় থেকেই কাউকে প্রার্থী করবে।
ভাগ্যের কী নিদারুণ পরিহাস। একসময় মোর্চা বলতেই লোকে আমাকে বুঝত। জোর করে সেটা হাইজ্যাক করে নিলে। এখন মোর্চা মানেই নাকি বিনয় তামাং। তা হোক, এখন তোমার সময়। কিন্তু দলটার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তো আমার নাম মুছে ফেলতে পারবে না। তাছাড়া, আজ আমি লুকিয়ে আছি। কে বলতে পারে, কাল হয়ত তোমাকেও আমার মতোই লুকোতে হতে পারে।
শুরু থেকেই তুমি ‘অনুপ্রেরণা’র রাস্তা বেছে নিয়েছো। তোয়াজ করার রাস্তা বেছে নিয়েছো। রাজ্যের মন্ত্রী–নেতা–আমলারা যেভাবে তোয়াজ করে, তুমিও সেই দলে নাম লিখিয়েছো। মনে রাখবে, ঘিসিং সাহেব কখনও জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে তোয়াজ করেননি। আমিও কখনও রাজ্য সরকারকে অহেতুক তোয়াজ করিনি। সেই কারণেই পাহাড়ের মানুষ একসময় ঘিসিং সাহেবের কথা শুনেছে, পরে আমার কথাও শুনেছে। আমরা ছিলাম যথার্থই পাহাড়ের নেতা। কিন্তু তুমি তা নও। তুমি হলে চাপিয়ে দেওয়া একজন পুতুল। ‘তিনি’ যা বলবেন, তোমাকেও তাই বলতে হবে। এর বাইরে গেলেই, তোমার পরিণতি আমার মতোই হবে। যাদের তুমি কখনও চোখেও দেখোনি, যাদের নাম শোনোনি, তাদের খুনের মামলায় তোমাকে জুড়ে দেওয়া হবে।
থাক এসব পুরনো কথা। কাল দেখলাম, কার্শিয়াংয়ে একটা মিছিলের ছবি। তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলনী। এসেছেন অরূপ বিশ্বাস। সেখানে তুমিও হাজির। তা, কী বার্তা দিয়ে গেলেন ওই অরূপ বিশ্বাস? পরিষ্কার বলে গেলেন, ‘আমরা উন্নয়ন করব, আর অন্যদের লোকসভায় পাঠাবেন?’ বন্ধু, কথাটার মানে বুঝলে? এর অনেক রকম মানে হয়? তুমিও তো সেই বিজয়া সম্মেলনীতে ছিলে। হ্যাঁ, কথাগুলো তোমাকে শুনিয়েই বলা। বুঝিয়ে দেওয়া হল, ওই জিটিএ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকো। এর বেশি উড়তে যেও না। ভুলেও লোকসভায় প্রার্থী দেওয়ার কথা ভেবো না। তোমার দৌড় ওই জিটিএ পর্যন্ত, তাও আমরা দয়া করে যতদিন রাখব, ততদিন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে সেখান থেকেও যে কোনওদিন সরিয়ে দেব।
একবার ভেবে দেখো, তুমি জিটিএ চেয়ারম্যান। উন্নয়নের টাকা তোমার হাত দিয়েই খরচ হওয়ার কথা। এরপরও মন্ত্রী বলছেন, আমরা উন্নয়ন করছি। তার মানে, তোমার কোনও ভূমিকাই নেই। যা করার, রাজ্য সরকারই করছে। তোমার সামনেই তোমার অবদানকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। চুপচাপ শোনা ছাড়া তোমার কিছুই করার ছিল না।
কয়েকদিন আগেই তোমার সঙ্গী সাথীরা লোকসভায় প্রার্থী বাছাইয়ের কথা বলছিল। কাকে প্রার্থী করা হবে, এরকম কয়েকটা নামও ভেসে উঠেছিল। এমনকী তোমার নামও সেই তালিকায় ছিল। ভেবেছিলেন, এমপি হয়ে দিল্লি যাবে। অন্তত পাঁচ বছর সাংসদ পদ থাকবে। কিন্তু সমতলের মন্ত্রী তোমাদের আচ্ছা করে বুঝিয়ে দিল, তোমাদের গুরুত্ব কতখানি।
বন্ধু, এখনও অনেক পথ বাকি। এখন যতই তাঁবেদারি কর, একদিন তুমিও হাড়ে হাড়ে টের পাবে। বারবার মেয়াদ বাড়বে, তুমি চাপিয়ে দেওয়া চেয়ারম্যান থাকবে, কিন্তু তার বেশি তোমাকে বাড়তে দেওয়া হবে না। আর তোমার পক্ষে আর যাই হোক, ওদের চোখে চোখ রেখে কথা বলা সম্ভব নয়। আমি এখন সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে। দূর থেকে শুধু মজা দেখে যাচ্ছি। আর অপেক্ষায় আছি, তুমি কবে আমার কাছে আশ্রয় চাইবে।
(বিমল গুরুং কোথায়, তিনিই জানেন। না, তিনি গোপন ডেরা থেকে এরকম কোনও হুঙ্কার ছাড়েননি। তিনি এমন খোলা চিঠিও লেখেননি। কিন্তু যদি লিখতে বলা হত, তাহলে কী লিখতেন, সেটা ভেবেই এই লেখা। )