অন্তরা চৌধুরি
আমার ভাই টুকাই। আর দশজনের থেকে কিছুটা আলাদা। স্বাভাবিক হাঁটাচলা বা কথা বলা, কোনওটাই পারে না। কিন্তু ওর চোখেমুখে একটা অদ্ভুত মায়া আছে। বাড়ির সবাই ওকে খুব ভালবাসে।
কে কেমন মনের মানুষ, তা মানু্ষ কতখানি বোঝে জানি না। কিন্তু পশুপাখিরা এই ব্যাপারে বোধ হয় মানুষের থেকে বেশি সংবেদনশীল। তারা বুঝতে পারে, কে তাদের কতটা ভালবাসে।
একটা টিয়াপাখি রোজ আসত। কারও পোষা ছিল কিনা, জানা নেই। কোথা থেকে আসত, কোথায় ফিরে যেত, কিছুই জানা নেই। কিন্তু আমার ছোট জেঠুর বাড়িতে আসাটা ওর একটা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কেউ কিছু খেতে দিলে খেত না। সে সারাক্ষণ থাকত টুকাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে। টুকাইকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হলে সেও বাথরুমে যেত। টুকাইয়ের সঙ্গে পায়ে পায়ে বেরিয়ে আসত। টুকাই বসলে সে বসত টুকাইয়ের কাঁধে, নয়তো মাথায়।
টুকাইয়ের যদি শরীর খারাপ হয়, সে বিছানায় টুকাইয়ের মাথার কাছেই থাকবে। সেই সময় কেউ যদি টুকাইয়ের গায়ে হাত দিতে যায়, সেই টিয়া চিৎকার জুড়ে দিত। কামড়েও দিত। ভারী অদ্ভুত একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল ওদের মধ্যে। টুকাই কথা বলতে পারত না। কিন্তু পাখিটা অনর্গল ওর সঙ্গে কথা বলে যেত। কী বলত, তা শুধু সেই পাখিটাই জানে। কী জানি, হয়ত টুকাইও জানত। মাঝে মাঝে ভাবি, এত মানুষ থাকতে ওই পাখিটা শুধু টুকাইয়ের কাছেই কেন আসত ?
অনেকের কাছে হয়ত বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে না। মনে হবে, সিনেমা বা সাহিত্যের কোনও কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু এরকম ছবিটাই ছোট জেঠুর বাড়িতে দেখে এসেছি। একদিন বা দুদিন নয়, টানা ছ-বছর ধরে রোজ আসত সেই টিয়া।
পাড়ার অনেকেই বিষয়টা জানে। অনেকে শুধুমাত্র সেই পাখিটাকে দেখতেই জেঠুর বাড়িতে আসত। একদিন হঠাৎ সেই পাখিটাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল পাশের বাড়ির কার্নিসের ছাদে। অনেকদিন আগেকার ঘটনা। রাস্তায় বা কারও বাড়িতে টিয়া পাখি দেখলেই মনে পড়ে যায়। টুকাইকেও যখন বিষণ্ণ হয়ে বসে থাকতে দেখি, তখন মনে হয় সেই পাখিটা যদি ফিরে আসত!
(বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় ফিচার— স্মৃতিটুকু থাক। ছোট ছোট অনেক বিষয় মনকে ছুঁয়ে যায়। সেইসব নস্টালজিয়া উঠে আসে এই কলামে। যে কেউ লিখতে পারেন। পাঠিয়ে দিন বেঙ্গল টাইমসের ঠিকানায়। ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)