দুই বিদায়ী মেয়রের গপ্পো

সরল বিশ্বাস

এখন তাঁরা কেউই আর মেয়র নেই। দুজনেরই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। দুজনেই এখন প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান। বলা যেতে পারে, মুখ্য প্রশাসক।

একজন জিতেন্দ্র তেওয়ারি। একজন ফিরহাদ হাকিম।

দুজনেরই আরও দুটো পরিচয় আছে। জিতেন্দ্র হলেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধয়াক। এদিকে, ফিরহাদ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী।

জিতেন্দ্র চিঠি লিখলেন ফিরহাদকে। সেই চিঠি ফাঁসও হয়ে গেল।

চিঠির বিষয় কী?‌ রাজ্য সরকার নাকি আসানসোলের প্রতি বঞ্চনা করছে। কেন্দ্র নাকি আসানসোলকে স্মার্ট সিটি করতে চেয়েছিল। তাহলে ২ হাজার কোটি টাকার অনুদান পাওয়া যেত। রাজ্য সরকারের বাধায় নাকি তা করা যায়নি। আসানসোল কেন্দ্রীয় আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

jitendra

হঠাৎ এতদিন পর জিতেন্দ্রর এটা মনে হল কেন?‌ চিঠি লিখতেই পারেন, কিন্তু এই চিঠি ফাঁস হল কীভাবে?‌ আসলে, এইসব চিঠি লেখাই হয় ফাঁস করার জন্য। এই চিঠি জিতেন্দ্র তেওয়ারি আরও একবার লিখতে পারবেন?‌ তাঁকে জিজ্ঞেস করুন তো, চিঠিতে কী লেখা আছে। ক’‌লাইন বলতে পারবেন, ঘোর সন্দেহ আছে। বাংলা বা হিন্দিতে নিশ্চয় বলতে পারবেন। কিন্তু চিঠিটা তো লেখা আছে ইংরাজিতে। এটা জিতেন্দ্র লিখেছেন, বিশ্বাস করতে হবে?‌ এবার যিনি চিঠি পাচ্ছেন। তিনি এই চিঠির উত্তর লিখতে পারবেন?‌ এমনকী পড়ে পুরোটা মানে বুঝবেন কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।

প্রশ্নটা খুব পরিষ্কার। যে ভাষাটা জানেন না, বোঝেন না, সেই ভাষায় চিঠি লেখার কী দরকার?‌

তাছাড়া, চিঠিটা কে কাকে লিখছেন?‌ নিশ্চয় একজন পুর প্রশাসক লিখছেন পুরমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু কী আশ্চর্য!‌ যে ছবিটা সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, জিতেন্দ্র তেওয়ারি লিখছেন বিধায়কের প্যাডে। কোন চিঠিটা কোন প্যাডে লিখতে হয়, সেটুকুও বোঝেন না। এই বিদ্যেবুদ্ধি নিয়েই এতদিন আসানসোলের মতো শহরের মেয়র হয়েছিলেন।

চিঠি পাওয়ার পর পুরমন্ত্রীর কী প্রতিক্রিয়া?‌ একবার বললেন, বিজেপি তাকে দিয়ে লেখাচ্ছে। অন্য দলে চলে যেতে চাইলে চলে যাক। পরে নরম করে বললেন, জিতেন্দ্র আমার ভাইয়ের মতো। ওর সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক।

একবার ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। এর কোনওটাই কি পুরমন্ত্রীর বলার কথা!‌ এটা কোনও ব্যক্তিগত চিঠি নয়। সরকারি প্যাডে, সরকারি চিঠি। সেই সরকারি চিঠির উত্তরে ‘‌অন্য দলে চলে যাক’‌ বা ‘‌ও আমার ভাইয়ের মতো’‌ এসব অর্বাচীনের মতো কথা বলা যায়!‌

যেমন মেয়র, তেমন পুরমন্ত্রী। সবই ‘‌অনুপ্রেরণা’‌।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.