বুদ্ধবাবু, কী বিপদ ডেকে আনলেন, যদি বুঝতেন!‌

সরল বিশ্বাস

টিভির পর্দায় হঠাৎ ব্রেকিং নিউজ। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাক্তনের বাড়িতে বর্তমান। তবে কি বুদ্ধবাবু আবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন!‌ চ্যানেলে চ্যানেলে সৌজন্যের বিজ্ঞাপন। আহা, এমন সৌজন্য কে কবে দেখিয়েছে!‌

কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, তিনি বেরিয়ে এলেন। তাঁকে বাইরে ছাড়তে এলেন বুদ্ধদেব–‌জায়া মীরা ভট্টাচার্য। কোনও অতিথি এলে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়া একটা সৌজন্য। সেই সৌজন্য দেখালেন মীরাও।

mamata12

কিন্তু কী কথা হল প্রাক্তন আর বর্তমানের মধ্যে?‌ বুদ্ধবাবু এটা বাইরে বলার মতো মানুষ নন। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসও দেবেন না। সাংবাদিকদের কাছে ঢাক পিটিয়ে বলবেনও না। যিনি বলার, তিনি কিছুটা বললেন।

তাঁর কাছেই শুনলাম, বুদ্ধদেববাবু নাকি বই পড়তে ভালবাসেন (‌ভাগ্যিস বললেন, নইলে জানতেই পারতাম না)‌।

এখানেই যেন অশনি সংকেত। বুদ্ধবাবু নিজেও জানেন না, তিনি নিজের কী ক্ষতি ডেকে আনলেন।

এরপর তিনি যদি নিজের লেখা ওই সত্তর–‌আশি খানা বই নিয়ে হাজির হয়ে যান!‌ তখন কী হবে!‌ মাধ্যমিক–‌উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় থাকা সব ছাত্রছাত্রীকে ব্যাগ ভর্তি নিজের লেখা বই দিয়েছেন। একেকটি ব্যাগের ওজন প্রায় তিরিশ কেজি। তাতে কথাঞ্জলি, নামাঞ্জলি থেকে শুরু করে কী নেই!‌

খুব উদ্বিগ্ন। যতটা না বুদ্ধবাবুর শরীরের কথা ভেবে, তার থেকেও বেশি তাঁর ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা ভেবে। এবার এইসব বই যদি বস্তাবন্দী হয়ে এসে পাম অ্যাভিনিউয়ে হাজির হয়!‌ যদি তিনি অনুরোধ করেন, একবার পড়ে দেখবেন, কেমন লাগল, জানাবেন। তাহলে বুদ্ধবাবুর কী করুণ দশাই না হবে!‌

mamata, buddha

সৌজন্যের খাতিরে হয়ত এক দুটো বই পড়তেও হবে। এরপর আর কারও শরীর–‌মন ভাল থাকে!‌ ম্যাক্সিম গোর্কি, মার্কেজ পড়া একটা লোককে যদি এই বইগুলো পড়তে হয়, সেটা মানসিক নির্যাতনের সামিল। মানসিক শ্লীলতাহানিও বলা যায়।

এখানেই শেষ নয়। এরপর তিনি হয়ত একদিন জানতে আসবেন, কেমন লাগল!‌ সৌজন্যের খাতিরে বুদ্ধবাবুকে হয়ত বলতে হবে, ভাল। শেষ বয়সে এমন একটা মিথ্যে তাঁকে বলতে হবে!‌

বেচারা বুদ্ধবাবু। সভা সমিতিতে নেই। প্রেস কনফারেন্সে নেই।এখন আর পার্টি অফিসেও যেতে পারেন না। বাড়িতেই থাকেন। ফেসবুকও করেন না। কিন্তু তাতেও কি রেহাই আছে!‌ বিপদ যে বাড়ি বয়ে আসে। আসে সৌজন্যের মোড়কে। এই বয়সে এসেও এমন বিড়ম্বনা যে তাঁর জন্য অপেক্ষা করবে, কে জানত!‌

তবু বলব, এই বিপর্যয়ের জন্য তিনি নিজেই দায়ী। নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনলেন। বই পড়তে ভালবাসেন, এটুকু ওই মহীয়সী নারীকে না বললেই চলছিল না!

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.