রাজ্যভাগের জল্পনায় অদ্ভুত এক ধোঁয়াশা সব শিবিরেই

সৃজন শীল

‌কয়েকদিন ধরে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে রাজ্যভাগের জল্পনা। না, এখনই নতুন রাজ্য হয়ত হচ্ছে না। জল্পনা যা ছড়িয়েছে, তা হল, আপাতত এপ্রিল–‌মে নাগাদ আলাদা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল। তারপর আস্তে আস্তে নতুন রাজ্যে রূপান্তর। এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল শুধু উত্তরবঙ্গকে নিয়ে নয়, থাকবে বিহার ও অসমেরও কিছু অংশ।

প্রথমে বিষয়টা সীমাবদ্ধ ছিল শুধু উত্তরবঙ্গেই। বাংলার মূলস্রোত কাগজগুলি মোটামুটি নীরবই ছিল। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে খবরকে চেপে রাখা বড়ই কঠিন। সে আপন নিয়মে ঠিক ছড়িয়ে পড়ে। এখন কলকাতার কাগজগুলিতেও অল্পবিস্তর উঠে আসছে।

প্রশ্ন হল, এটা কি নিছকই জল্পনা?‌ অনন্ত মহারাজ কি হাওয়ায় ভাসিয়ে যাচ্ছেন?‌ নিজের দর বাড়িয়ে চলেছেন?‌ মনে হয় না। কেন্দ্রের থেকে কোনও আশ্বাস না পেয়ে তিনি এমনটা বলছেন?‌ খোদ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম করে তিনি এই আশ্বাসের কথা বলছেন। কই, বিজেপির দিক থেকে তো পাল্টা কাউন্টার আসছে না। কেউ তো বলছেন না, অনন্ত মহারাজ ভিত্তিহীন কথা বলছেন। তাঁরা আপাতত যেটা বলছেন, এই সংক্রান্ত আলোচনার কথা আমরা কিছু শুনিনি। অর্থাৎ, আলোচনা হয়নি, এটা জোর দিয়ে বলার জায়গায় তাঁরাও নেই। তাঁরাও জানেন, আজ না হোক কাল, রাজ্যভাগ অনিবার্য। উত্তরবঙ্গের নেতৃত্ব যতই পুলকিত হোন, দক্ষিণবঙ্গের নেতৃত্বকে অসহায় হয়েই এই সিদ্ধান্ত মানতে হবে।

এবার রাজ্যের শাসক দল। গত কদিন ধরে এত জল্পনা ছড়াচ্ছে, কই শাসকের দিক থেকে স্পষ্ট বক্তব্য তো আসছে না। আমরা কোনওভাবেই রাজ্যভাগ হতে দেব না, এমনটা বলার লোক কি সত্যিই হারিয়ে গেল?‌ বেশিকিছু করতে হবে না, বিধানসভায় তো প্রস্তাব আনতে হবে। শাসকদলের সম্মতি ছাড়া সেই প্রস্তাব পাশ হওয়া সম্ভব নয়। অন্তত বিধানসভায় এই মর্মে কোনও প্রস্তাব আসবে না, এটুকুও জোর দিয়ে বলার জায়গায় নেই।

অর্থাৎ, বিষয়টি সম্পর্কে তাঁরাও অবহিত। হয়ত বিশেষ কোনও এক জায়গায় সম্মতি দেওয়াও আছে। লোকদেখানো কিছু বিরোধিতা, মিছিল, ভাঙচুর— এসব হবে। কিন্তু আসল জায়গায় নীরব সম্মতিই থাকবে। যেভাবে লোকসভা বা রাজ্যসভায় একের পর এক বিলের ক্ষেত্রে হয়েছে। বাইরে প্রতিবাদ, কিন্তু ভোটাভুটির সময় হয় সমর্থন, নইলে ওয়াক আউট করে পরোক্ষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। রাজ্যভাগের ক্ষেত্রেও বিষয়টি তেমন হবে না তো?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.