একটি মিছিল ও নাগরিক উদাসীনতা

বাপ্পাদিত্য সান্যাল

বামেদের মিছিল মানে বড্ড অনীহা। ওই ছবি দেখানো চলবে না। কাগজে ওই ছবি ছাপলে মুশকিল। পাছে তিনি রেগে যান!‌

শহুরে শৌখিন বোদ্ধারা গত কয়েক বছর ধরে হামেশাই বলে চলেছেন, লেফট শেষ। ওরা আর জীবনেও ফিরতে পারবে না।

এটা এক দুজনের মত নয়। চায়ের ঠেকে বসুন। বাসে বা মেট্রোয় চড়ুন। বা কর্পোরেট সেক্টরের ছেলেরা যখন সিগারেট ফুঁকতে বাইরে আসেন। অথবা মোবাইলে মুখ গুঁজে সারাক্ষণ কীসব খুটখাট করে চলেন। অনেকেই এই জাতীয় মন্তব্য করে থাকেন। ইদানীং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ প্রচুর বেড়ে গেছে। সবাই বোদ্ধা। সবাইকেই কিছু না কিছু মন্তব্য করে নিজেকে জাহির করতেই হবে। এঁদের কথার নির্যাস, তৃণমূল একেবারে কোরাপ্টেড। ওদের সরাতে পারবে বিজেপিই।

left5

আরও কিছুক্ষণ কথা শুনে যান। রথ আসবে, যোগী আসবে, তারপর সেই চেনা ডায়লগ। আর একটু কথা শুনে যান। বুঝবেন, এঁদের রাজনীতির দৌড় এটুকু, তা ওই ফেসবুক ঘেঁটে। আধঘণ্টা কাগজ পড়ার ধৈর্য নেই। বছর পাঁচেক আগের রাজনৈতিক ঘটনা বা চরিত্র সম্পর্কে কোনও ধারনাও নেই। এঁরা সেই গ্রহের প্রাণী, যাঁরা ভাবেন, হাতে স্মার্টফোন থাকলেই বোধ হয় বিশ্বজয় করা যায়।

তাঁদের কথা থাক। কিন্তু যাঁরা কাগজ চালান, তাঁদের এই উদাসীনতা কেন? অজ্ঞতার জয়গান গাইতে গাইতে তাঁরা নিজেদের অজান্তে নিজেরাও ক্রমশ অজ্ঞ হয়ে পড়ছেন। গ্রাম বাংলার বাস্ত চিত্র সম্পর্কে তাঁদের ধারনাও স্বচ্ছ নয়। বামেরা যেটুকু আছে, শক্ত মাটির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে। বিজেপির মতো হাওয়ায় ভাসা পার্টি নয়। সেই কারণেই, ২০১৪ তে যে বিজেপি ১৮ শতাংশ পায়, দু বছর পর সেটাই আবার দশের নিচে নেমে যায়। তাই আজ যদি কুড়ি পারসেন্ট টপকেও যায়, আগামীদিন আবার দশে নেমে আসতে সময় লাগবে না। নিচুতলায় যাঁরা বিজেপিমুখী হয়েছেন, তাঁরা যত না বিজেপি পন্থী, তার থেকে ঢের বেশি তৃণমূল বিরোধী। একদিন তাঁরা আবার ঠিক লাল পতাকার আশ্রয়েই ফিরে আসবেন।

left4

সিঙ্গুর থেকে দুদিন ধরে হাজার হাজার মানুষ হেঁটে আসছেন। শহর লাল পতাকায় ছেয়ে যাচ্ছে। এসব দৃশ্য তাঁদের চোখেই পড়ল না। কেউ কেউ দিল্লির কৃষক র‌্যালির ছবি ছেপে ব্যালান্স করতে চেয়েছেন। দেখাতে চেয়েছেন, বাম মিছিলের ছবি তো ছেপেছি। দিল্লির বামেদের ছবি ছাপা আসলে কলকাতার মিছিলের ছবি না ছাপারই এক অজুহাত। রাজ্যের সবথেকে বড় ইভেন্ট অধিকাংশ কাগজের প্রথম পাতায় বা চ্যানেলের আলোচনায় জায়গা পায়নি। তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে চেনা চিত্রনাট্যের সেই লোকদেখানো প্রশাসনিক বৈঠক। কী জানি, সেই কারণেই হয়ত এই দিনটাকে বেছে নেওয়া। যেন তাঁর বৈঠক দেখাতে গিয়ে বামেদের মিছিল বাদ পড়ে যায়।

কী জানি, প্রশাসনিক বৈঠক না দেখালে হয়ত সরকারি বিজ্ঞাপনের লিস্ট থেকে সেই কাগজ বাদ পড়ে যাবে। তাই বামেদের মিছিল পাঠিয়ে দাও ভেতরের পাতায়। ছবি যদি দিতেই হয়, দিল্লির বাম মিছিলের দিয়ে দাও। দিল্লির ছবি দিলে তিনি রাগ করবেন না। হয়ত ক্ষমার চোখেই দেখবেন। আইটেমটা রইল। কিন্তু দিদিমণিও রাগলেন না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.