বৃষ্টি চৌধুরি
পনেরোই আগস্ট মানেই বেজে উঠবে সেই গান। ছাব্বিশে জানুয়ারিও আমাদের পাড়ায়, আমাদের হৃদয়ে সেই একই গানের অনুরণন। সেই গান নিঃশব্দে পেরিয়ে গেল ৫৪ বছর।
অ্যায় মেরে ওয়াতন কি লোগো
জরা আঁখ মে ভরলো পানি
যো শহিদ হুয়ে হ্যায়, উনকি
জরা ইয়াদ করো কুরবানি।
গানটা বেজে উঠলেই কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, আট থেকে আশই, সবাই একসুরে গেয়ে ওঠেন।
কোনও জনপ্রিয় ছবির গান নয়। বিদেশে শুটিং করতেও যেতে হয়নি। তবু কীভাবে অমরত্ব পেয়ে গেল গানটা! কীভাবে আমাদের অস্তিত্ব ও অভ্যাসের অঙ্গ হয়ে উঠল একটা গান।
একটু ইতিহাসের দিকে তাকানো যাক। ১৯৬২ তে ভারত-চীন যুদ্ধ। হাজার হাজার সৈনিক প্রাণ বিসর্জন দিলেন সেই যুদ্ধে। কত পরিবার হল স্বজনহারা। কেউ হারালেন স্বামীকে, কেউ ভাইকে, কেউ সন্তানকে। এই শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কিছু করা যায় না? কীভাবে সেই স্বজনহারানো পরিবারকে একটু শান্তি দেওয়া যায়!
এগিয়ে এলেন কবি প্রদীপ। রচনা করলেন সেই কালজয়ী গান। সুর দিলেন ই রামচন্দ্রণ। বেশ কয়েকদিন ধরে চলল মহড়া। কে গাইবেন ? আর কে গাইতে পারতেন, লতা মঙ্গেশকার ছাড়া ? ১৯৬৩-র ২৬ জানুয়ারি। গানটা প্রথম গাওয়া হল লালকেল্লায়। সেখানেই আনা হয়েছিল শহীদদের পরিবারের আত্মীয়দের। সেইসঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেওয়া সৈনিকদের। অনেকের চোখ দিয়ে তখন ঝরছে অশ্রু। একটু দূরেই ছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। তিনিও পারলেন না চোখের জল আটকে রাখতে। সারা দেশ কান্না দিয়ে বরণ করে নিল এই অমর সৃষ্টিকে।
তারপর সে এক ইতিহাস। না ছিল টিভি চ্যানেল, না ছিল ফেসবুক, টুইটার বা ইউটিউব। তবু কী আশ্চর্য্য, গোটা দেশে মন্ত্রের মতো ছড়িয়ে গেল গানটা। কার্গিলের রণাঙ্গনে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও সৈনিকেরা গেয়ে ওঠেন এই গান। হিন্দু থেকে মুসলিম, গোর্খা থেকে মারাঠি, সবাই যেন একাত্ম হয়ে ওঠে ওই একটি গানে। অনুপ্রাণিত করার এমন গান আর কটা আছে ? একেবারে শেষপর্বে ‘খুশ র্যা হনা দেশ কি প্যারো।’ মুছে দিয়ে যায় সব বিভেদরেখা।
যুদ্ধের নয়, এ যেন চিরশান্তির গান।
অ্যায় মেরে ওয়াতন কি লোগো। স্বাধীনতা দিবস আর এই গান যেন সমার্থক। কীভাবে তৈরি হল এই গান ? কোথায় প্রথম গাওয়া হয়েছিল। কাদের সামনে ? কেন কেঁদে ফেলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ? পড়ুন, জেনে নিন।