সরল বিশ্বাস
বিধানসভায় বিরোধীদের যখনই দেখি, হতাশ হই। কখনও কখনও বিরক্তও হই। বিরোধীদেরও যে দায়িত্বশীল হতে হয়, এই বোধটুকুও ক্রমশ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আবার সেটাই দেখা যাচ্ছে এই অধিবেশনেও।
কলকাতা পুরসভার এই ডামাডোলে বিধানসভায় তড়িঘড়ি নতুন বিল আনা হল। বিলের মূল প্রতিপাদ্য, এবার থেকে পুরসভার সদস্য নন, এমন ব্যক্তিও মেয়র হতে পারবেন। কে নতুন মেয়র হতে চলেছেন, তাও পরিষ্কার।
শাসকদলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। তাই সহজেই এই নতুন বিল পাস হয়ে যাবে, এ নিয়েও কোনও সংশয় ছিল না। কিন্তু এমন একটি দিনে বিরোধীদের ভূমিকা কী ছিল? কং এবং বাম, দুই শিবিরই মেতে রইলেন বয়কটে। কখনও লবিতে স্লোগান, কখনও নকল অধিবেশনের একঘেয়ে নাটক। আর বাকিটা হল প্রেস কর্নারে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দেওয়া। যুক্তির লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে তাঁরা ফাঁকা মাঠে চিৎকার করে চললেন।
এই বিল পাস হতই, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিবেশনে বিপক্ষে যুক্তিগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরা যেত। এবং সেই যুক্তির কাছে অনেকটাই অসহায় মনে হত শাসকপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে। সুস্থ একটা বিতর্ক হতেই পারত, যা মানুষের মনে কোথাও একটা ছাপ ফেলত। কোথায় কোথায় অসঙ্গতি, কী কী সমস্যা হতে পারে, তা সুন্দরভাবে তুলে ধরা যেত। অন্তত যুক্তির নিরিখে বিরোধীরা অনেক এগিয়ে থাকতেন, এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু সেই লড়াইয়ে বামেদের দেখাই গেল না।
শুধু এই অধিবেশন নয়, প্রতিটি অধিবেশনেই প্রায় ওয়াক আউট–টা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরোধীতা বলতেই এঁরাও শুধু হল্লাবাজিটাই বুঝছেন। একবারও বুঝতে চাইছেন না, শাসক দলের দুশোর বেশি বিধায়ক। তাঁদের অধিকাংশই হল্লাবাজিতে দারুণ পারদর্শী। বরং যুক্তির লড়াইয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। অথচ, বিরোধীরা বারবার যুক্তির লড়াইয়ের জায়গা ছেড়ে দিয়ে গলাবাজির লড়াই আর সস্তা নাটকের লড়াই করে চলেছেন।
বিরোধীতার নামে এই হঠকারিতা আর হল্লাবাজি কবে থামবে, কে জানে!