শুধু ব্রিজ নয়, সাঁতরাগাছিতে সমস্যার পাহাড়

সাঁতরাগাছিতে দুর্ঘটনার পরই হঠাৎ করে যেন টনক নড়েছে। কিন্তু আসল সমস্যাগুলো সেই আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। ব্রিজে কোথায় কী সমস্যা, সেদিকে ফোকাস চলে যাচ্ছে। কিন্তু আসল সমস্যা শুধু ব্রিজে নয়, ছড়িয়ে আছে নানা দিকে। সেদিকে আলো ফেললেন রজত সেনগুপ্ত।

হাওড়া স্টেশনের বোঝা কমাতে নাকি সাঁতরাগাছি স্টেশনকে আরও বেশি করে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। বহুদিন ধরে কথাটা শুনে আসছি। কিন্তু সাঁতরাগাছি গেলেই আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে একরাশ বিরক্তি। এই স্টেশনের পরিকাঠামো যে আরও বাড়াতে হবে, তা নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল আছে বলে মনেও হয় না। পদপিষ্ট হওয়ার যে দুর্ঘটনা, সেটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সার্বিক অব্যবস্থারই ফল। যেসব সমস্যা সহজে সমাধান করা যা্য়, সেগুলিকেও দিনের পর দিন অহেতুক ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সমস্যার তালিকাটা দীর্ঘ। তার দু একটি বিষয়ে বেঙ্গল টাইমসে আলোকপাত করলাম।

১) প্রায় সব ট্রেনই হাওড়া ঢোকার আগে সাঁতরাগাছিতে দাঁড়াচ্ছে। এই তালিকায় রাজধানী বা দুরন্তও আছে। বোঝাই যাচ্ছে, স্টেশনের গুরুত্ব কতটা। কিন্তু নামার পরই নানা ভোগান্তি। যাত্রী কোনদিকে বেরোবেন ? বহুদূরে ফ্লাইওভার। বয়স্ক যাত্রী থাকলে বা রোগী থাকলে বিকল্প ব্যবস্থা নেই।

২) যে কোনও স্টেশনে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে এক নম্বর দিয়ে বেরোলে গাড়ি পাবেন না। না আছে ট্যাক্সিস্ট্যান্ড। না আছে রাস্তা। যদি ভুল করে কেউ বেরিয়েছেন, মূল রাস্তায় উঠতে হয়ত এক ঘণ্টা লাগবে। কারণ রেলগেটেই তাঁকে অনন্তকাল ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। একটি ব্রিজ বা সাবওয়ে করলেই এই সমস্যার কিছুটা সমাধান সম্ভব।

satragachhi

৩) বেরিয়ে যাত্রীদের পক্ষে মূল রাস্তায় যাওয়া যেন এক দুর্বিসহ অভিজ্ঞতা। বয়স্ক লোক বা রোগী থাকলে ভাবাও কঠিন। মূল রাস্তা পর্যন্ত একটা ফ্লাইওভার বা চলমান সিঁড়ি করা যায় না?

৪) বেরিয়ে যানবাহন ধরাও বেশ কঠিন। বাসগুলো দাঁড়িয়েই থাকে। ছাড়তেই চায় না।
৫) যেখানে টার্মিনাস করা হয়েছে, সেটা স্টেশন থেকে অনেকটা দূরে। এত দূরে লোকে যাবে কী করে ?
৬) ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থাকলেও ইচ্ছেমতো দর হাঁকে। একটা প্রিপেইড কাউন্টার করা হয়েছে। অধিকাংশ সময়ই সেখানে ট্যাক্সি থাকে না। যে ভাড়ার তালিকা ঝোলানো হয়েছে, সেটাও বাস্তবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

৭) ট্রেন ধরতে যাওয়ার সমস্যা তো আরও বেশি। যেদিকে সবাই ঢোকে, সেখানে টিকিট কাউন্টারের অবস্থা ভয়াবহ।
৮) ভোরের দিকে অনেক ট্রেন ছাড়ে। কিন্তু একটিমাত্র কাউন্টার খোলে। আপনাকে অন্তত আশিজনের পেছনে দাঁড়াতে হবে। টিকিট কাটতেই অন্তত আধঘণ্টা। মাথার উপর কোনও শেড নেই। বৃষ্টি পড়লে অসহায়ভাবে ভিজতে হবে।
৯) এতবড় একটা স্টেশন। সকালের দিকে মাত্র একটি কাউন্টার খোলে ? টিকিট কাটতে আশিজনের পেছনে দাঁড়াতে হবে? ট্রেন তো অপেক্ষা করবে না। এরপরেও লোকে টিকিট কাটে, সেটা যাত্রীদের মহানুভবতা।
১০) রাস্তার ধারে ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মটিই মূল ভরসা। অথচ, সেই প্ল্যাটফর্মকে ভালভাবে ব্যবহারই করা হয় না। হাওড়া যাওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ট্রেনকে তো এই প্ল্যাটফর্মে দেওয়া যায়। অন্তত তাহলে এতদূর হেঁটে ফুটব্রিজ পেরোতে হয় না।

(এটি ওপেন ফোরামের লেখা। এই বিভাগটি পাঠকদের মুক্তমঞ্চ। আপনিও আপনার সমস্যার কথা, ভোগান্তির কথা, অভিজ্ঞতা বা পরামর্শের কথা তুলে ধরতে পারেন। সেই লেখাগুলি প্রতিকারের জন্য যথাস্থানে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এই সব লেখার লিঙ্কগুলি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে ই মেলের মাধ্যমে পাঠানো হবে। এতে আপনার সমস্যার কিছুটা সুরাহা হতেও পারে। লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ bengaltimes.in@gmail.com)

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.