অশূর নয়, মা দুর্গার আসল শত্রু বরুণ দেব

কুণাল দাশগুপ্ত

মা দুর্গা বিচলিত। দৈবশক্তির লিঙ্ক ফেলিওর। অ্যান্টেনা কাজ করছে না। টেনশন মানে হাই টেনশন। গাদাগুচ্ছেক অ্যালপ্রাজোলাম, ক্লোনাজিপাম খেয়েও উদ্বেগ কমছে না। শান্তি উধাও। প্রতিবারের মতো এবারও বিশ্বকর্মাকে আগেভাগে পাঠিয়েছিলেন। প্রেমে ব্যর্থ রাজেশ খান্নার মতো মুখ করে ফিরে এসেছেন। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলেন, আই অ্যাম সরি। সেই আদ্যিকালের হাতুড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কি কোনও গবেষণা করা যায়?‌ ডক্টরেট না হোক, একটা এম টেক তো করাতে পারতেন। আবহবিজ্ঞানটা তো পড়াই যেত।
ঘুমের ওষুধ খাওয়া ড্রাউসি দুর্গা হাই তুলে বললেন, এতগুলো যুগ পার করে আজ হঠাৎ এসব কথা কেন, কারিগর দেব?‌

durga2
ধুর, দেব–‌টেব আর বলবেন না। মর্তে একসময় দেব বলতে দেবানন্দকে বোঝাতো। সে নাকি সবুজ রঙের ঠিকা নিয়ে বসেছিল। সে এখন এখানে। আরেক দেব বর্তমানে আছে বাংলায়। সেও সবুজ। উন্নয়ন মানে লাঠিসোঁটা হাতে ব্লক অফিস ঘেরা। কারখানা বলতে বোমা–‌বন্দুক। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা তো। তাই এবার আমার তেমন কোনও কাজ ছিল না। দু–চারটে ঘুড়ি উড়িয়ে ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন। বিরক্ত সহকারে বললেন বিশ্বকর্মা।
আশ্চর্য হয়ে দুর্গা বললেন, তাহলে দেবীও নিশ্চয় আছে। বিশ্বকর্মার জবাব, প্রথম দেবের সময় দেবী ছিলেন ওয়াহিদা রহমান, মধুবালা, কল্পনা কার্তিক। আর এখন দেবী হলেন কোয়েল, শুভশ্রী ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিছুটা গম্ভীর স্বরে দুর্গার প্রশ্ন, তাহলে আমি দেবী নই?‌

আজ্ঞে, আপনার আসন টলমলো। বাচ্চাদের ভোটটা আপনার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। মিনমিন করে বললেন বিশ্বকর্মা।

প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে দুর্গা বললেন, কেন যুগ যুগ ধরে তো তারাই আমাকে সবথেকে বেশি চেয়েছে।

তখন তো আপনার ক্ষমতায় মরচে ধরেনি। শরতের আকাশ থাকত নীল, খেলা করত সাদা মেঘ। তাই নিয়ে কবিতা, গান কতকিছু লেখা হত। পুজোর ফুলে ভরে উঠল পুজার দিনের রবি। এখন তো দুর্গাপুজো মানেই দমাদম গানের মাঝে ঝমাঝম বৃষ্টি। বলেই ফেললেন বিশ্বকর্মা। আরও বললেন, একদিনের মধ্যে একটা হাতি নিয়ে যতটুকু ঘোরা যায়, ততটুকু ঘুরেই এইসব বলছি। হে দুর্গতি নাশিনী দূর করো দুর্গার দুর্গতি।

কী উল্টোপাল্টা বকছ?‌ তুমিও কি টেনশনের ওষুধ খেয়েছো?‌ ধমক দিলেন দুর্গা।

সরি, তবে আপনাকে এখন দুজনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। এক তো অশূর, ওর যুদ্ধের আদব কায়দা আপনার জানা।

দুর্গার প্রশ্ন, দ্বিতীয়টি কে?‌

durga3

বিশ্বকর্মা বললেন, ওই আপনার ঘরের শত্রু বিভীষণ, মানে বরুণ। তাকে জব্দ করতে না পারলে এবার স্পিড বোট নিয়ে আপনাকে বাপের বাড়ি যেতে হবে।

আতঙ্কিত দুর্গা বললেন, ওমা তাহলে কী হবে?‌ বরুণ দেবের জন্য কী অস্ত্র ব্যবহার করব, সেটাই তো জানা নেই। গোপনে গোপনে ও দলবিরোধী কাজ করছে। কিন্তু প্রমাণ দেব কীভাবে?‌ শোকজ লেটার ধরাবই বা কীভাবে?‌

বিশ্বকর্মা বললেন, আপনি প্লিজ আবার ব্রহ্মার শরণাপন্ন হোন।

দুর্গা বললেন, কেন?‌

মৃদুস্বরে বিশ্বকর্মা বললেন, ‘‌ব্রহ্মা জানেন গোপন কর্মটি।’‌ দশ হাত যথেষ্ট তো?‌ দশ হাত যথেষ্ট তো?‌ বিড়বিড় করতে করতে বিষণ্ণ বিশ্বকর্মা প্রস্থান করলেন।‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.