‌কমলামাসি ডিলিট পেলেন

সন্দীপ লায়েক
————————————————
অমিয়বাবু খুব রগচটা শিল্পী ও কবি মানুষ। তবে মনটা বড়ই উদার। বিশেষত তার আপন জ্ঞাতি ভাইদের প্রতি। স্ত্রী রেনুকাদেবী সেটা সম্যক বোঝেন। বোঝে কাজের বুড়ি মাসি কমলাও। জানে বাবু যতই রেগে ওঠে নোংরা কথা যাই পাড়ুন কিছুক্ষণ পর আবার ন্যাতানো, সব ঠিকঠাক, যেন কিচ্ছুটি হয়নি। ঠিক যেন সততার সাদা প্রতিমূর্তি।

অমিয়বাবুর এহেন মিলিটারি মেজাজের অনুপ্রেরণায় বাড়ির আসবাব থেকে শুরু করে ছোট্ট মাইক্রোওভেন শিল্পটি পর্যন্ত ঝকমক তকতক করছে। দয়া করে ভাববেন না এরজন্য তাঁর গিন্নি বা কমলামাসি রঙ্গশ্রীর দাবিদার! বরঞ্চ এ হেন কর্মে জগৎজোড়া হোর্ডিংয়ে অমিয়বাবুর হাসিমুখ শোভা পাওয়াই উচিত।

কারণ তার বদমেজাজের কোপ পড়েছে বাড়ির প্রতিটি শিল্পে, তা সে বাসনপত্র হোক বা রেফ্রিজেটর। তাই পুরনো আমলের শিল্প ধুলিস্যাৎ হয়ে গড়ে উঠেছে নবরূপে সজ্জিত।

এজন্যই তার বাড়িতে উৎসবের কোন সিজিনও নেই, শেষও নেই। প্রতিটি খেপের ঠিক পরদিন অমিয়বাবু নব উদ্যমে উৎসব মাদার শুরু করে দেন। তার অনুপ্রেরণায় কখনও ভাঙা পুরনো রেফ্রিজেটর চেঞ্জ হয়ে হয় রেফ্রিজেটর উৎসব, তো কখনও ভাঙা ইডলি মেকার পাল্টে হয় ইডলি মেলা, তো কখনও ঠুনকো মাইক্রোওয়েভ থেকে মাইক্রো সম্মেলন।

তার এহেন বাল্যখিল্য কুটিল মনভোলানো আচরনের জন্য বাড়ির লোকের শান্তি নেই, উপায়ও নেই। কারণ প্রসাশন তথা টাকা তার হাতেই। গিন্নিকে এবার পূজায় মাত্র তিনটে শাড়ি কিনে দিয়েছিলেন তারপর প্রায় দুমাস কেটে গেল। অথচ নতুন শাড়ি দেয়ার নামটি পর্যন্ত নেই! বলে বেড়ান সব নাকি মিটিয়ে দিয়েছেন। এমনকি বলেন তার পূর্বপুরুষেরা তাঁকে ঋণে গলাঅব্দি ডুবিয়ে দিয়ে গেছেন বলে তার পক্ষে সৌন্দর্যায়নের বাড়াবাড়ি ছাড়া কোনও কিছুই সম্ভব নয়।

phd

এভাবে ভালোই চলছিল। কিন্তু বাধ সাধল সেদিন। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে অমিয়বাবু দেখেন তার সাধের ল্যাপটপ কিবোর্ডের একটি কি খোয়া গেছে। খুব রেগে গিয়ে উৎকট চেঁচাতে শুরু করলেন তিনি। গিন্নি থেকে কমলা এমনকি ছোট্ট বাচ্চাটি পর্যন্ত বাদ গেল না। চারদিক তন্নতন্ন করে খুঁজেও ডিলিট কি টির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল না। অধীনস্ত কমলাকে এমন ধমকালেন ও চমকালেন সে কি বলব! বললেন কী বোর্ডের কি না পেলে নাকি এক্কেবারে পার্মানেন্টলি সাসপেন্ড করে বিশ্বকাঙলা করে দেবেন।

কিন্তু নাহ। কোনওমতেই বস্তুটি পাওয়া গেল না। তাই শেষমেষ যা হয় আরকি! ল্যাপটপটি উর্দ্ধ গগনে তুলে মেঝেতে আছাড় মারলেন। অত:পর আলফাল বকতে বকতে সকলের কান পচিয়ে নিজেই সব পার্টস কুড়িয়ে ফেললেন। তারপর কিছুক্ষণ চিমসে মুখে হাতপা ছুঁড়ে আবার মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে হাসি মুখে ক্রিম ঘসে হোর্ডিংয়ে শোভা দিলেন। বললেন–কমলা ইধার আউ, খুব খিদে পেয়েছে..মুড়ি বাতাসা লাও উইদ কাঁচালংকা।

এদিকে বুড়ি কমলা মাসির মনে শান্তির লেশমাত্র নেই। যে করে হোক ডিলিট তাকে পেতেই হবে..এ গঞ্জনা বঞ্চনা আর সহ্য হয় না। ঠিক করলেন বাবু কাজে বেরুলেই হাওয়াই চপ্পল পরে ল্যচ্কা কোমর ধরে জীবনে প্রথমবার সারা ঘরে ঝাঁট দেবেন আর ডিলিটটি উদ্ধার করবেন।

পরদিন সক্কাল সক্কাল অমিয় বাবু নতুন ল্যাপটপ কিনে এনে ল্যাপের ওপর নবরূপে সজ্জিত করলেন। নীলসাদা স্ক্রিনের ওপর ফুটে উঠল- ডিলিট মিনস ডিলেট। তারপর মাইক্রোসফট পেন্টে গিয়ে কয়েকটা আঁকা বাঁকা দাগ দিয়ে সবাইকে ডেকে বললেন …দেখো দেখো এই হল গিয়ে আর্ট। এর দাম কুচুটে বুদ্ধিজীবীরাই বোঝে, তোমাদের মত গো মুখ্যুরা (বিপ) বুঝবে! শুধুমুধু ঘেউ ঘেউ করবে।

এদিকে হয়েছে কি, অপজিট ডিরেক্সন থেকে কমলামাসি হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে তার লুকানো ডোনাল্ড ট্রাম্পকার্ডটি ছাড়লেন। তারপর কি? হুম তারপর কি? কুচুকুচু হস্তে শোভিত হল কালকের হারানো সেই ছোট্ট ডিলিট।

অমিয়বাবু সেটা দেখে মুচকি হেসে বললেন, আমি তোমার কানের লতি দেখেই বুঝেছিলাম তুমি ঠিক খুঁজে আনতে পারবে।

তারপর অমিয়বাবু আওড়াতে লাগলেন– এবার নিজেকে হেবি পাগল ছাগল লাগছে। খুব কবিতা পাচ্ছে। খাতার মাথায় এই সুযোগে শত্রুমিত্রাক্ষর কবিতা গুলো টপাটপ লিখে ফেলি।

টপাং করে লাফিয়ে ঝপাং করে খাতাটা টেনে নিয়ে ল্যাপটপের ওপরে রেখে চিহিহি করে দু হাত হাল্কা বেঁকিয়ে বললেন–সবলোগ দূর হটো আমি এবার কবিতা লিখুম!

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.