রসগোল্লা রহস্য

লালমোহনবাবুর নতুন উপন্যাস রসগোল্লা রহস্য। তাঁর ডিলিট পাওয়া আর কেউ আটকাতে পারবে না। কেন এমনটা বললেন ফেলুদা?‌ রবিবারের সকালে এক অন্য সোনার কেল্লা। দ্রুত পড়ে ফেলুন।।

আজ রবিবার, তোপসের টিউশন পড়তে যাওয়া নেই। তাই বিকালবেলা সোফায় শুয়ে শুয়ে ইনস্টাগ্রামে সদ‍্য শুরু হওয়া ফ্লিম ফেস্টিভ্যালের ছবি দেখছে। শাহরুখ আর পিসির ছবি দেখে তার হঠাৎ ‘করন অর্জুন’ সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল। ব‍্যাকগ্রাউন্ডে মনে হলো গান বাজছে, বন্ধন ইয়ে, প‍্যার কা বন্ধন হ‍্যায়। তোপসের চোখে অটমেটিক জল এসে গেলো। তোপসে দেখল পাশে বসে ফেলুদা তখন টিভিতে খবর দেখছে, কেষ্টা প্রকাশ‍্যে হুমকি দিচ্ছে। এমন হুমকি তো মাফিয়া গুন্ডারা দেয়, তোপসের মুখে এই কথা শুনে ফেলুদা বলল, সাধে কি আর উনি বলেছেন, আমি গুন্ডা কন্ট্রোল করি।
এমন সময় কলিং বেজ বেজে উঠলো। দরজা খুলতেই লালমোহন বাবু রেগেমেগে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করলো। তারপর সোফাতে ধপাস করে বসে বলল, হরেন্ডাস ব‍্যাপার মশাই! কি ব‍্যাপার ফেলুদা জিঞ্জেস করাতে লালমোহন বাবু বললেন, দিব‍্যি আপনার বাড়িতে আসছিলাম। নিউ টাউনের সিগন‍্যালে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ গাড়ির পিছনে জোর ধাক্কা। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো গাড়ি এসে ঠুকলো বুঝি! কিন্তু নেমে দেখি হরেন্ডাস ব‍্যাপার, গাড়ি না! আমাদের গরমেন্টের তৈরি বিশ্ব বাংলার বল। ব‍্যাক লাইটটা ভেঙে গুড়ো হয়ে গেলো! ফেলুদা মুচকি হেসে বললেন, ওটা ভাইপোর বল। তোপসে অবাক হয়ে বলল, ওটা তো সরকারি বল! ফেলুদা বলল, বল গড়াগড়ি খাওয়ার আগে পর্যন্ত সবাই সেটাই জানতো।

sonar kella
লালমোহন বাবু ফেলুদাকে বলল, তা এবারে শীতে কোথায় যাওয়া হবে ঠিক করলেন কিছু? ফেলুদা একটা চারমিনার ধরিয়ে দুটো রিঙ ছেড়ে বললেন, গ‍্যাং বা ড‍্যাং তো যাওয়া যাবেনা! পাহাড় খুব জোর হাসছে। লালমোহন বাবু উত্তেজিত হয়ে বললেন, তাহলে রাজস্থানেই যাওয়া হোক। সেই কবে সোনারকেল্লা দেখেছিলাম, আপনার মনে আছে? ফেলুদা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো। লালমোহন বাবু বললেন, ছোট্টো ছেলে মুকুলটা তো ভয়ে আমার কোলের ভিতর ঢুকে পড়েছিল। আচ্ছা মিত্তির মশাই, মুকুল অনেক বড়ো হয়ে গেছে না! এখনও কি ভয় পায়? ফেলুদা চারমিনারে আরেকটা টান দিয়ে বলল, হ‍্যাঁ ভয় পায়। তবে সিবিআইয়ের, তাইতো সে এখন পদ্ম বনে লুকায়। লালমোহন বাবু ফেলুদার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে না পেরে তোপসের মুখের দিকে তাকায়। তারপর ফেলুদাকে উদ‍্যেশ‍্য করে বলেন, মুকুল সম্বন্ধে আরেকটি প্রশ্ন করতে পারি? ফেলুদা ঘাড় নাড়তে লালমোহন বাবু বললেন, মুকুল কি কাঁটা বেছে পদ্ম বনে ঢুকেছে?

sonar kella5rasagolla
ফেলুদা চারমিনারের শেষটা অ্যাসট্রেতে গুঁজে লালমোহন বাবুকে বললেন, রহস্য উপন্যাসের জন‍্য রাজস্থানে না গিয়ে দেগঙ্গা বা ভাঙড়ে যেতে পারেন। প্রতিদিনই মার্ডার হচ্ছে, সবাই জানে খুনি কে, কিন্তু কেউ মুখ খুলছে না। লালমোহন বাবু অবাক হয়ে, বলেন কি মশাই! কেন কেউ মুখ খুলছে না? ফেলুদা হেসে বলেন, ওটাই তো রহস্য। তোপসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, তুমি কি ডেঙ্গুর কথা বলছো! ফেলুদা তোপসের পিঠ চাপড়ে বলে, সাবাস! আস্তে আস্তে তুই আমার অ্যাসিসেন্ট হওয়ার যোগ‍্য হচ্ছিস। লালমোহন বাবু অবাক হয়ে বলেন, ডেঙ্গু তো বাংলায় নেই! ওরা তো ভিনদেশী। ফেলুদা লালমোহন বাবুকে বলল, বুঝলেন গাঙ্গুলী বাবু ডেঙ্গু নিয়ে লিখলে একটা সমস‍্যা আছে। উপন্যাস আপনি প্রকাশ করতে পারবেন না। তার চেয়ে বরং আপনি রসগোল্লা নিয়ে একটা উপন্যাস লিখুন। সদ‍্য ওড়িশা থেকে যুদ্ধ জয় করে ফিরেছে। মার্কেটে ভালো খাচ্ছে সবাই। দুদিনেই জুকেরবার্গের সুগার ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। লালমোহন বাবু হেসে বললেন, এটা দারুণ বলেছেন। তাছাড়া রসগোল্লার ওপর আমার দুর্বলতা রয়েছে অনেকদিন থেকেই। কিন্তু উপন্যাসের নাম কি দেব? লালমোহন বাবু মাথা চুলকাতে লাগলেন।
বাড়ি ফেরার সময় গাড়ির দরজা খুলতে গিয়ে হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠলেন, পেয়েছি! পেয়েছি! তারপর গদগদ মুখে ফেলুদার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার পরবর্তী উপন্যাসের নাম ‘রসগোল্লা রহস্য’। ফেলুদা প্রত‍্যুতরে হেসে বললেন, এবারে আপনার ডি-লিট পাওয়া আর কেউ আটকাতে পারবে না…

(‌হোয়াটসঅ্যাপ সংগৃহীত।)‌

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.