দিব্যেন্দু দে
বাঙলা ভাষায় ঢ্যামনা বলে একটা শব্দ আছে। গালাগাল হিসাবে ব্যবহার হলেও এর আসল মানে হল, নির্বিষ সাপ। যারা ঢ্যামনা তারা নিজেদের সাপের মতো ভয়ঙ্কর বলে মনে করে। ভাবে তার কামড়ে বিষে সব শত্রু জর্জরিত হয়ে যাবে। কিন্তু আসলে কিছুই হয় না। কামড়ানোর মতো সাহস তার নেই। তার দৌড় হিস-হিস আওয়াজ করা অবধি।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের ২য় দফা হয়ে গেল। এই ২ দফায় প্রধানত জংগলমহলে মানে পিছিয়ে পড়া এলাকায় ভোট হয়েছে। এবার আস্তে আস্তে শহরাঞ্চলে ভোট হবে। শহরের মানুষের মনে খুব গর্ব যে তাঁরা রাজনিতি সচেতন, সকালে কাগজ পড়েন, সন্ধ্যায় টি ভি দেখেন, রাজ্য ও দেশের খবর তাঁদের নখের ডগায়।
শহরের মানুষ আরও ভাবেন, গ্রামের মানুষরা আকাট মূর্খ। তাঁদের কাছে ভোট মানে শুধুই সেজেগুজে বুথে যাওয়া, গণতন্ত্র কী তা তাঁরা বোঝেনই না। আসলে গরিবগুরবো মানুষ তো, নেতাদের দয়ার ওপর ভিত্তি করে জীবন কাটাতে হয়। তাই যে যখন ক্ষমতায় থাকে তার হয়ে ভোট দিতে গ্রামের মানুষ বাধ্য হয়। নিজের গ্রামের বাইরে তাঁরা কোনও খবরই রাখেন না। সারদা কেলেঙ্কারি কী? নারদায় কে কার টাকা নিল? পোস্তার উড়ালপুল খায় না মাথায় দেয় তা তাঁরা জানেনই না। তাঁরা ২ টাকা কেজির চাল পেলেই খুশি।
কথাগুলো পুরোপুরি ভুল নয়। সত্যিই গরীব মানুষকে অনেক কিছুর সঙ্গে আপস করতে হয়। কিন্তু শহরের মানুষ? তাঁরা তো রাজনীতি সচেতন। তাঁরা তো নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। তাঁরা শিক্ষিত মানুষ। লেখাপড়া জানেন, গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। কে ভাল কে মন্দ সে বোধ তাঁদের নিশ্চয়ই আছে?
না কি নেই? সারদা কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরেও গত লোকসভা ভোটে যে ভাবে তৃণমূল শহরাঞ্চলে জয়ী হয়েছিল, তাতে কিন্তু শহরের মানুষের বোধবুদ্ধি নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। আর এবার? সারদার পাশাপাশি নারদা, উড়ালপুল, টেট কেলেঙ্কারি, আলিপুর থানায় ঢুকে পুলিশ পেটানো, বেহালা কলেজে উপাচার্যকে পেটানো অনেক কিছু ঘটে গেছে।
ভোটে কি হবে তা কেউ বলতে পারে না। সব মানুষের অধিকার আছে নিজের পছন্দের দলকে ভোট নেওয়ার। কিন্তু এত কিছুর পরেও যদি দেখি শহরাঞ্চলে তৃণমূল গাদাগাদা আসন জিতেছে, তাহলে বলতেই হবে, শহুরে বাঙালির মতো ঢ্যামনা জাতি আর দুটো নেই। তারা সাপের মতো দুর্বল মেরুদণ্ডের প্রাণী। কিলবিল করে। হিসহিস করে। কিন্তু বিষ ঢালতে পারে না। ঢালবে কী করে? ঢ্যামনার আবার বিষ থাকে না কি?