আবার বসন্ত বিলাপ নয়, এ যেন বসন্ত প্রলাপ

কমেডির নামে ভাঁড়ামি। কাহিনীর কোনও মাথামুণ্ড নেই, চিত্রনাট্য একেবারেই পাতে দেওয়ার মতো নয়। ভাল ভাল অভিনেতা, কিন্তু দুর্বল চিত্রনাট্যে তাঁরাই বা কী করবেন!‌ সবকিছুতেই সস্তা চমক দিতে চাইলে ভাল ছবি বানানো যায় না। এই সহজ সত্যিটা যদি দুই পরিচালক বুঝতেন!‌ ‘‌আবার বসন্ত বিলাপ’‌ দেখে রিভিউ লিখেছেন সৌম্যজিৎ চৌধুরি।। ‌

আমার জন্মের আগে মুক্তি পেয়েছিল বসন্ত বিলাপ। তাই তখন সরাসরি দেখার সুযোগ ছিল না। এমনকী হলে গিয়েও দেখার সুযোগ ছিল না। পরে টিভিতেই দেখেছি। এখন তো হরেক রকম চ্যানেল, মাঝে মাঝেই দেখা যায়। চাইলে ইউটিউবেও দেখা যায়। দীনেন গুপ্তর সেই ছবি মনে দাগ কেটে আছে।

ভেবেছিলাম, আবার বসন্ত বিলাপ বোধ হয় তেমনকিছু হবে। অন্তত কাছাকাছি কিছু একটা হবে। কিন্তু চূড়ান্ত হতাশ হলাম। যা প্রত্যাশা ছিল, তার ধারকাছ দিয়েও যায়নি এই ছবি। হলে বাকি যাঁদের দেখলাম, তাঁরাও সম্ভবত আমার মতোই একরাশ হতাশা নিয়ে হল থেকে বেরোলেন।

basanta bilap2

পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, খরাজ মুখার্জি, মীর আছেন শুনে প্রাথমিকভাবে কৌতূহল হওয়াই স্বাভাবিক। তিনজনই উচ্চজাতের অভিনেতা। কিন্তু দুর্বল চিত্রনাট্য হলে তাঁরা আর কীই বা করতে পারেন!‌ তাই কমেডি শেষমেষ ভাঁড়ামিতে বদলে গেছে। আমার ধারণা, এই তিন অভিনেতাও এই ছবিটাকে তাঁদের জীবন থেকে ডিলিট করতে চাইবেন।

basanta bilap1

গল্পটা যেমন বোকা বোকা। চিত্রনাট্যও তেমনই লোকহাসানো। পরিচালনার ইচ্ছে হতেই পারে, তাকে কি কাহিনীকার বা চিত্রনাট্যকার হতেই হবে?‌ লেখাটা সবার কাজ নয়। দুর্বল সংলাপ আর অহেতুক ভাঁড়ামি অনেক ভাল হাসির সম্ভাবনাকেও নষ্ট করে দেয়। মুনমুন সেন এমনিতেই যথেষ্ট ন্যাকা। তাঁকে আরও নতুন করে ন্যাকা বানানোর কোনও দরকার ছিল না। এই বয়সের মুনমুন সেনের ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘‌ড্রিম গার্ল’‌ গানটা একেবারেই বেমানান। প্রকাশনা জগৎ সম্পর্কেও দুই পরিচালকের কোনও ধারনা আছে বলে মনে হল না। যে জগৎটা অচেনা, সেটা নিয়ে কাজ না করলেই পারতেন। মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে গান গাওয়ানো একটা নিছকই সস্তা চমক। আরেক মেয়র পারিষদের কন্যাকেও হাজির করেছেন। এসব চমক দিয়ে এক আধদিন কাগজে শিরোনাম হওয়া যায়। কিন্তু মনে দাগ কাটার মতো ছবি বানানো যায় না। মীরকে দিয়ে অহেতুক ভাঁড়ামি করানো হয়েছে। হয়ত ঋতুপর্ণ ঘোষের আদল আনার চেষ্টা হয়েছে। অন্তত দর্শ হিসেবে আমার তেমনটাই মনে হয়েছে। বিকৃত রুচিটা বড় বেশি করে প্রকট হয়েছে। এমন একটা প্রস্তাবে মীর সাড়া না দিলেই ভাল করতেন।

ইচ্ছে হল, আর অমনি একটা সিনেমা বানিয়ে দিলাম। সেটা আসলে কাকে ছুঁতে চাইল, সেটাই স্পষ্ট নয়। মাঝে মাঝে ভাবি, এইসব ছবির প্রোডিউসার জুটে যায়! লোকের টাকা এত সস্তা হয়ে গেল!‌ ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.