কলম্বিয়া গর্জেও খুঁজছিলাম রবি ঠাকুরের সেই ছোট নদীকে

মধুজা মুখোপাধ্যায়

কর্মসূত্রে দীর্ঘ দিন দেশের বাইরে থাকলেও বাঙালিয়ানাট়া ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। প্রতিদিন বাঙালি বলে বেশ একটা গর্বও অনুভব করি। তাই পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি বা বেড়াতে যাই না কেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সদা সাথে সাথে ঘুরে বেড়ান। এবারও যখন চতুর্থ বারের জন্য পোর্টল্যান্ড,ওরেগন- এ বেড়াতে গেলাম, তখনও  রবি ঠাকুরের সঙ্গ পাবার কোনও ব্যতিক্রম হল না । কীভাবে সেটা পরে বলছি। আগে বলি কী দেখে তাঁর কথা মনে পড়ল।

পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলেছে সেই নদী।। (ছবিঃ শুভজিৎ সেন)

পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলেছে সেই নদী।।(ছবিঃ শুভজিৎ সেন)

পোর্টল্যান্ড গেলে প্রতিবার নতুন নতুন জায়গা আবিষ্কার করি। চোখে  থাকে মুগ্ধতা, কারণ আমেরিকার পশ্চিম দিক যাকে বলে নর্থ ওয়েস্ট প্যাসিফিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত। আর প্রকৃতি সর্বদা মুগ্ধ করার জন্য ব্যস্ত । এবারের  বিশেষ আবিষ্কার ও আকর্ষণ ছিলো Columbia River Gorge। প্রায় ৪,০০০ ফুট গভীর আর ১৩০ কিমি দৈর্ঘ্য এই গর্জের।  নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০০ কিমি এবং বলা হয় নদীবিধৌত এলাকা প্রায় ফ্রান্স দেশের সমান । নদীর একদিকে ওরেগন রাজ্য আর অপরদিকে ওয়াশিংটন রাজ্য। আমার কলম্বিয়া নদী দর্শন হল ওরেগন এর Multnomah কাউন্টির Crown Point এর Vista House থেকে।নদীর দুপাশে পাহাড়ের তৈরি প্রকান্ড দেওয়াল। দেওয়ালের মাঝখান দিয়ে সাপের মত বয়ে চলেছে Columbia নদী। যত দূর চোখ যায় নদী বয়ে চলেছে এঁকে  বেঁকে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে, একের পর এক বাঁক পেড়িয়ে। এর সঙ্গে আছে মেঘের অবিরাম  খেলা , দলে দলে মেঘ ভিড় করে পাহাড়ের চূড়া ধরে নিচের দিকে নেমে আসছে । ঠিক যেন মনে হয় কুন্ডলী পাকিয়ে পাকিয়ে ধোয়া উঠছে নদী থেকে আর পাহাড়ের গায়ে তুলোর মত ভেসে বেড়াচ্ছে। সবুজ ,নীল্ ও সাদার অদ্ভুত মেলবন্ধন তখন আমার চোখের  সামনে। দূরের পাহাড় গুলো নীল্ , কাছের গুলো সবুজ আর পায়ের নীচে খাদের ঢাল বেয়ে পান্না সবুজ গাছের সমারোহ। মনটা যেন  কবিগুরুকে  খুঁজে বেড়াচ্ছিল।

ফিরে যাই লেখার শুরুতে যেখানে বলেছিলাম কবিগুরুর সঙ্গ কীভাবে পেলাম । Columbia নদীর অপরূপ সৌন্দর্য্য  দেখে মনে পড়ল ছোটবেলায় পড়া “আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।পার হয়ে যায় গরু,পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার,ঢালু তার পাড়ি। “. হলই বা বিদেশ , আর নাইবা পার হল গরু বা গাড়ি। কিন্তু আমার মন যে পার হয়ে নদীর বাঁক ধরে ধরে অনেক দূর চলে গেছে, তা বেশ টের পেলাম। হালকা মেঘলা হওয়া এসে জানান দিল বেশ শীত শীত ভাব। সেই হিমেল হাওয়া যেন আরও এক মুগ্ধতা বয়ে আনছিল। এবার ফিরতে হবে। মনের মধ্যে Columbia Gorge র ছবি নিয়ে পরবর্তী গন্তব্যের দিকে পা বাড়ালাম ।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.