অণু গল্প
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত
আমেরিকার শিকাগো শহরে বিশাল এক শপিং মল। বিভিন্ন জিনিসের হরেক রকমের সম্ভার। প্রচুর লোকজন আসে শপিং করবার জন্য। প্রধান ফটকের সামনে একজন বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে থেকে প্রত্যেক লোকজনকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা করেন আর শপিং করবার ট্রলিটি এগিয়ে দেন।
সময় কাটানোর জন্য প্রায় রোজই এই শপিং মলে এসে নানা ধরনের নতুন নতুন জিনিসপত্র দেখার পাশাপাশি আমার হাঁটাহাঁটির পর্বটিও ভালোভাবে সমাধা হত। শপিং মলে ঢোকবার জন্য ফটকের সামনে দাঁড়ানো সদা হাস্যময় লোকটির সঙ্গে ভালোভাবে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। পুরোনাম – হার্ডসন ওয়েলম্যান। কৌতূহলবশত একদিন সরাসরি হার্ডসন সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম – এই বৃদ্ধ বয়সে এত কষ্ট করে কেন কাজ করেন? জানতে পারলাম প্রকৃত কারণটা। নিজের অবস্থা খুবই সচ্ছল। দুই ছেলে বোস্টনে থেকে চাকরি করে। নিজে চাকরি থেকে অবসর নেবার পর এই শপিং মলে কাজ করছেন। এখান থেকে যে ডলার উপার্জন করেন তার পুরোটাই প্রতিমাসে একটি ক্যান্সার হাসপাতালে গরিব মানুষদের চিকিৎসার জন্য দান করে দেন। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক সপ্তাহের ছুটির দিনে হাসপাতালের বিভিন্ন কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন বিনা পারিশ্রমিকে। প্রায় রোজই মলে গিয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলার পর খুব ভাল লাগত। কোনও কারণে শপিং মলে যেতে না পারলে মনটা ছটফট করত হার্ডসন সাহেবের সঙ্গে কথা বলার জন্য। উনিও পরে দেখা হলে আমার মলে না আসার কারণ জিজ্ঞাসা করতেন। প্রায়ই বলতেন – ঈশ্বর যতদিন কাজ করার শক্তি দেবেন, ততদিন তিনি এইভাবে মানুষকে ভালোবেসে সেবার কাজ করে যাবেন। হার্ডসন সাহেবকে যেদিন বললাম এবার আমি আমার নিজের দেশে ফিরে যাচ্ছি, উনি আমার হাত দুটো চেপে ধরে বললেন – তোমার সঙ্গে পরিচয় হয়ে, তোমার সঙ্গে কথা বলে আমার খুব ভাল লাগত। ভাল থেকো। দেশে ফিরে গিয়ে আমার কথা ভুলে যেও না। আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখো। অনুভব করলাম আমাদের দুজনের চোখেই জল।
(মন ছুঁয়ে যাওয়া অনুভূতি। অণু গল্পও বলতে পারেন। আপনিও এমন অণু গল্প লিখতে পারেন। পাঠিয়ে দিন বেঙ্গল টাইমসের ঠিকানায়। চোখ রাখুন শনি ও রবিবার। ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)