শান্তনু দাম
খুব ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে প্রথম ব্রিগেড এসেছিলাম। সেই অভ্যেস আজও ছাড়তে পারিনি। কর্মসূত্রে দেশের নানা প্রান্তে থাকতে হয়েছে। কিন্তু যখনই ব্রিগেড হয়েছে, ছুটে আসতে ইচ্ছে করেছে বারবার। কখনও পেরেছি, কখনও পারিনি।
একসময় চুটিয়ে এস এফ আই করতাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরই ঢুকে যাই অন্য এক চাকরির আবহে। গত বারো বছর বাংলায় সেভাবে থাকার সুযোগই হয়নি। তবু চেষ্টা করেছি, যখন ব্রিগেড, তখন কলকাতায় থাকার। বামফ্রন্টের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কমতে কমতে দুদিনে এসে ঠেকেছে। একটি ব্রিগেড, আরেকটি ভোট।
এবারও হাজির হয়েছিলাম। কোনও প্রত্যাশা থেকে নয়, বলতে পারেন, না এসে থাকতে পারিনি বলে। কে কী বললেন, সেটা বড় কথা নয়। নেতারা কর্মীদের বিরাট কিছু বার্তা দিতে পারেন, এমনটাও মনে করি না। তবে ভাল লাগে হার না মানা সেই কর্মীদের মনোবল দেখে।
ওঁদের অনেকের ঘরবাড়ি আক্রান্ত। নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কত লোকের নামে মিথ্যে মামলা। ব্রিগেডে আসার জন্যও হয়ত ফিরে গিয়ে চড়া মাশুল দিতে হবে। তা সত্ত্বেও ওঁরা এসেছেন। ওঁদের সেলাম।
এই মানুষগুলোকে দেখলে কেমন একটা শক্তি পাই। কত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে এঁরা লড়াই করছেন। এঁদের লড়াইয়ের তুলনায় আমাদের ভালবাসা কিছুই নয়। এমনকি নেতাদের লড়াই বা পরিশ্রমকেও তুচ্ছ মনে হয় এই লড়াকু সৈনিকদের আত্মত্যাগের কাছে।
দেখতে এসেছিলাম, ব্রিগেড কাকে নেতা বলে মেনে নেয়। সেই উত্তর পেয়ে গেছি। কোনও সন্দেহ নেই, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এখনও বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু তাঁর শরীর সত্যিই খারাপ। তিনি আর ভোটে লড়বেন বলে মনে হয় না।
সূর্যকান্ত মিশ্র যোগ্য রাজ্য সম্পাদক। সুবক্তা। কিন্তু তিনিও ভোটে দাঁড়াবেন বলে মনে হয় না। দলের রাজ্য সম্পাদক নিজের কে্ন্দ্রে বন্দী থাকবেন, এটা মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়। তাই অন্য কোনও মুখই ভাবতে হবে।
মহম্মদ সেলিমই হতে পারেন সেই মুখ। সেলিমের পক্ষে অসংখ্য যুক্তি দেখানো যায়। সেগুলো আর বলছি না। কারণ, অনেকেই তা জানেন। ব্রিগেডে আসা বেশ কয়েকজন মানুষকে জিজ্ঞাসা করলাম, কার বক্তৃতা সবথেকে বেশি নাড়া দিয়েছে ? উত্তর পেলাম মহম্মদ সেলিম। আমার নিজের উত্তরও তাই। তৃণমূল যে ভাষাটা বোঝে, সেই ভাষাতেই জবাব দিয়েছেন। অনেকগুলো ভাষা জানেন। সবথেকে বড় কথা, মানুষের ভাষাটা জানেন। অকারণ সাম্রাজ্যবাদ বা আমেরিকা টেনে আনেন না। মানুষের হৃদয়ে ঝড় তুলতে পারে, এমন ভাষাতেই কথা বলেন। যুবকদের কাছেও অনেকটাই গ্রহণযোগ্য।
এই প্লেনামে কী আলোচনা হবে, জানি না। তবে আমার মনে হয়, নির্বাচনে লড়ার আগে আমাদের মুখ কে হবে, তা ঠিক করা খুব জরুরি। মানুষ জানতে চাইবেন, বামেদের মুখ কে ?এবং সেটা পরে ঠিক করব বললে চলবে না। মানুষের তা জানার অধিকার আছে। তৃণমূলের মুখ নিয়ে তো কোনও দ্বিধা নেই। তাহলে বামেদের মুখ নিয়েই বা দ্বিধা থাকবে কেন ?
এই প্লেনামেই সিদ্ধান্ত হোক। আর লড়াইয়ের সেই কান্ডারি কে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা না রেখে দ্রুত ঘোষণা করা হোক। এটাই পরিবর্তিত পরিস্থিতির দাবি।