সম্রাট অশোকের দেশ থেকে ঘুরে আসবেন নাকি ?

-শোভন চন্দ

মা সরস্বতীর কৃপায় এখানে আমার আগমন, সহজ কথায় উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে নতুন শহরে আসা । শহর কলকাতাকে ছেড়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। কি জানি এই অচেনা শহর এই পোড়া মনকে আপন করবে কিনা।

“পরিবর্তনই সংসারের নিয়ম” তাই এই গোলক ধাঁধায় পড়ে কোথাও যেন সবকিছু মানিয়ে নিয়েছিলাম। আমার নতুন শহর ভোপাল,মধ্যপ্রদেশের রাজধানী শহর। মাথা গোঁজার ঠাঁই আর খাদ্য জোগাড়ে দিন তিনেক সময় লেগে যায়। শুরু হয় নতুন জীবন।

কলকাতা থেকে শিপ্রা এক্সপ্রেসে আসার পথে ভোপালের পাহাড় জঙ্গলের মাঝে মাঝে ময়ূর হরিণেরা উঁকি দিচ্ছিল। ওদের পিছু করার লোভ তখন থেকেই মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলাম । তাই বেপরোয়া মনকে বেশিদিন লাগাম দিয়ে রাখতে পারিনি । মনে হচ্ছিল, ওরা যেন ডাকছে আমায়, বেরিয়ে পড়েছিলাম সাঁচির পথে । ভোপাল স্টেশন থেকে মেমো ট্রেন ধরে সকাল ১০.৩০ টা নাগাদ রওনা দিই। লোকাল ট্রেন আপন গদাইলস্করি চালে ১ ঘন্টা ১৫ মিনিটে গন্তব্যে পৌছায়। সূর্যদেব তখন প্রায় মধ্য গগনে ।

sacxhi3

সাঁচির স্তূপ মধ্যপ্রদেশের রায়সন জেলার সাঁচি শহরে অবস্থিত। এটি ভোপাল থেকে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। সাঁচির স্তূপ ভারতবর্ষের প্রাচীনতম প্রস্তর নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম। খ্রী;পূ; তৃতীয় শতকে অশোকের আমলে এর নির্মাণ কার্য শুরু হয়ে যায়। এর নির্মাণ কার্যের সময় তত্বাবধান ক্ষেত্রে অশোকের স্ত্রী বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। অশোকের বিবাহ স্থান হিসেবেও সাঁচিকে চিহ্নিত করা হয়।

সমতল থেকে বেশ অনেকটা ওপরে সাঁচির স্তূপ।পাথুরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠেই জল এবং খাদ্যের আবদারকে অগ্রাহ্য করতে পারিনি । তাই ওপরে একটি চটিতেই জল খাবার সেরে ফেলি। অবশেষে বুদ্ধের দর্শন, ছোট বড় অসংখ্য মূর্তি রয়েছে, তবে অধিকাংশই মস্তকহীন । দেখার মধ্যে দুটি স্তুপ আর কিছু প্রায় ভগ্ন মন্দির । তবে এত বছর পরেও স্তূপের গায়ে ফলকে যে নিপুণ পাথুরে খোদাইয়ের কাজ তা না দেখলে হয়তো সৃজনশীলতার এক দিক অদেখাই রয়ে যাবে। তবে একটা জিনিস খুবই মনে ধরেছিল এখানকার কাঠবেড়ালি কী সুন্দর হাত থেকে রুটি নিয়ে মহানন্দে নির্ভয়ে খাচ্ছিল। নীচে সুবিশাল সংগ্রহশালা, অসাধারণ গ্রন্থাগার অনেক জিজ্ঞাসার অবসান ঘটায় ।তবে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিল এখানকার জঙ্গল।

sachi2

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছিল আমি যেন জঙ্গলেই হারিয়ে গিয়েছিলাম কখনও ময়ূরের পিছনে ছুটে চলেছিলাম, কখনও বা খুব ধীরে ধীরে কৌশল করে হরিণের খুব কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম, এ অভিজ্ঞতা কলমের মাধ্যমে ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। প্রকৃতি যেন সরল সুন্দর রূপে এখানে বিরাজ করেছেন । পাহাড় জঙ্গল আর ভগবান বুদ্ধ সব মিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

একথা আজও অস্বীকার করতে পারিনি, সত্যি মন যেন এক আলাদা শান্তি লাভ করেছিল। তাই আর দেরি না করে মূল্যবান জীবন থেকে মাত্র একটি সপ্তাহ ভাগ্যের হাতে বন্ধক রেখে বেরিয়ে পড়ুন, দর্শন করুন গৌতম বুদ্ধের পুণ্যস্থান ।উপভোগ করুন স্রষ্টা ও তাঁর অনন্য সৃষ্টিকে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.