নির্মল দত্ত
সময় কত দ্রুত পেরিয়ে যায়। মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন। দেখতে দেখতে ২৫ বছর হয়ে গেল!
সেবার কলকাতা ময়দান জুড়ে একটা কথা খুব চাউর হয়েছিল, ডায়মন্ড সিস্টেম। এই ডায়মন্ড সিস্টেম জিনিসটা কী, তেমন বুঝতাম না। শুধু কাগজে পড়তাম, ডায়মন্ড সিস্টেম। মোহনবাগানের খেলার ধরনই নাকি পাল্টে গেছে। বড় বড় ব্যবধানে জিতছে। মোহনবাগানকে নাকি সাম্প্রতিক কালে এত ভাল খেলতে দেখা যায়নি।
এরই মাঝে চলে এল ডার্বি। সে অবশ্য কলকাতা লিগের ডার্বি নয়। সেবার ফেডারেশন কাপের আসর বসেছিল কলকাতায়। সেমিফাইনালেই মুখোমুখি কলকাতার দুই প্রধান। বলতে দ্বিধা নেই, আমি ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। কয়েকদিন ধরেই পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল। অমল দত্তর সেই চোখা চোখা বিশেষণ। কখনও বাইচুংকে বলছেন চুংচুং। কখনও স্যামি ওমেলোকে বলছেন ওমলেট। সোসাকে বলছেন শসা। একটা অজানা আশঙ্কাও যেন তাড়া করছিল। বিশ্রীভাবে হারতে হবে না তো! এই আশঙ্কা নিয়েই সেদিন মাঠে গিয়েছিলাম।
অমল দত্তর ওই উপেক্ষাই বোধ হয় সেদিন তাতিয়ে দিয়েছিল বাইচুং ভুটিয়াকে। উফ, সেদিন কী ফুটবলটাই না দেখেছিলাম। শুরুতে তুল্যমূল্য লড়াই। তারপর থেকে বাইচুং ঝড়। দুরন্ত সেই হ্যাটট্রিক। তার আগে বড় ম্যাচে নাকি হ্যাটট্রিক হয়নি। একটা করে গোল হচ্ছে, আর গ্যালারি উত্তাল হয়ে উঠছে। মাঠে কত লোক হয়েছিল, তখন বুঝতে পারিনি। তবে এটুকু বুঝেছিলাম, এক লাখ ছাপিয়ে গেছে। পরে শুনেছিলাম, এক লাখ একত্রিশ হাজার। এর আগে বা পরে যুবভারতীতে এত দর্শক আর কখনও হয়নি। শুধু যুবভারতীতে কেন, ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এমন লোক সমাগমের নজির নেই।
জয়ের একজন কারীগর যদি বাইচুং ভুটিয়া হয়ে থাকেন, তবে নেপথ্যের কারীগর অবশ্যই পিকে ব্যানার্জি। তিনিই বাইচুংয়ের ভেতরের আগুনটা উস্কে দিয়েছিলেন। এই একলাখ একত্রিশ হাজারের মূল কারণ দুই কোচের বাগযুদ্ধ। এই দুই কিংবদন্তি কোচই মাঠে লক্ষাধিক দর্শক এনে দিয়েছিলেন।
যতই আইএসএল আসুক, দুই প্রধানের লড়াই মানেই এক অন্য উন্মাদনা। ঠিক তেমনই উন্মাদনা পিকে–অমল বাগযুদ্ধে। দুজনের কেউই আজ নেই। এই পঁচিশ বছরে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কোচের কথাই বড় বেশি করে মনে পড়ছে।