নীল পাঞ্জাবি কালো ধুতি

সোমা দে
মেজোমামার বিয়েতে তার সঙ্গে প্রথম দেখা। না ঠিক দেখা নয়। আড়চোখে পলক ফেলে ফেলে নীল পাঞ্জাবি কালো ধুতি কে একটু বুঝে নেওয়া। কালো ধুতির চল সে সময় ছিল না। তাই সবার চোখই ছিল তার ওপর। নানারকম চাহুনি, যেমন “কি বোকা বোকা” “একি অদ্ভুত” “বাহ্ বেশ হাটকে তো” ছিল বটে। কিন্তু তাতে তাকে মোটেই অপ্রতিভ মনে হচ্ছিল না। বরং যেন একটু বেশিই স্বচ্ছন্দ। আর তাতে আড়চোখ আরও বেশি করে তাকেই খুঁজতে লাগলো। তার চোখ দু-একবার আমার চোখকে অ্যাকনোলেজ করেছিল বটে তবে খুব দ্রুত। ইতিমধ্যে এই পুরো সাইলেন্ট টেলিফিল্মটা কখন যে আমার ভাই ট্র্যাক করতে শুরু করেছে জানি না। মালা–‌বদলের ভিড়ে আমার কানের কাছে এসে বললো, “লাভ নেই। এনগেজড। আমাদেরই কোচিংয়ের মেয়ের সঙ্গে” । ড্যাম। চুরি করে ধরা পরে যাওয়া, তাও আবার সে চোরাই মাল যদি অকেজো হয়। ফিলিংসটা ঠিক কেমন হয় বলুন তো! যাক চোখাচুখি নিয়ন্ত্রিত হল তখুনি। সোনু নিগম হয়ে বিড়বিড় করলাম, জানা নাহি থা পিয়ার কি গলি মে।

anu galpo2

প্রায় ৭-৮ মাস পরে, অক্সিজেনে তখন পুজো পুজো গন্ধ। নতুন জামার মসমস, নতুন জুতোর ফোস্কা, পুরনো বন্ধুর হইচই, পুরনো রেস্টুরেন্টে নতুন মেনু, সব চলছিল নিজের তালে। উলটোদিকের টেবিলে আমাদের মতোই আরেক দল, একইরকম হুল্লোড়ে মত্ত। শুধু মুখগুলোই অচেনা ….. উহু একটা মুখ তো বেশ চেনা। আরিব্বাস। নীল পাঞ্জাবি কালো ধুতি যে। আজ সাদা শার্ট নীল ডেনিম। আর সঙ্গে সঙ্গেই মাথা বলে উঠলো, “না না, আর ও পথে না”। ব্যাস সোনু নিগম হয়ে বিড়বিড় করলাম, জানা নাহি থা পিয়ার কি গলি মে। কিন্তু ওপার থেকে ফোর জি নেটওয়ার্কের মতো শক্তিশালী চোখ যেন আমাকে ফলো করছে মনে হল। ইগনোর করতে, আরও বেশি করে মন দিলাম বিরিয়ানিতে। সবে দু-চামচ মুখে দিয়ে বিরিয়ানিতে মেডিটেশন শুরু করেছি, ওমনি “হাই, ডু উই নো ইচ আদার ….. ” সাদা শার্ট নীল ডেনিম আর তার দলবল, চোখের সামনে। কতক্ষণ হা করে ছিলাম মনে নেই। বাকি কী বলে গেল, মনে নেই। আলাপচারিতার শুরু। সুতপা কনুই-এর গুঁতো মেরে বলেছিল,”এই সেই? খবরদার। এনগেজেড কিন্তু।” এরকম সাবধান বাণী শুনে মনে হল, যেন ও সাবধান না করলে আমি যে কোনও মুহূর্তে সাদা শার্ট নীল ডেনিমকে জড়িয়ে ধরবো। আশ্চর্য্য। তা সেই সাবধানবাণীর ঠেলায় বা বিরিয়ানি কন্সেন্ট্রেশনে বাঁধা পড়ায়, আলাপচারিতাতে কন্সেন্ট্রেট করতে পারিনি। আমি মূলত শ্রোতাই হলাম। শেষে অবাক করে দিয়ে সুতপা হঠাৎ নবমীতে ম্যাডক্স স্কোয়ারের প্ল্যান বানিয়ে বসলো। সুতপাকে বুঝতে পারে কার সাধ্যি! আবার দেখা হওয়ার এক্সাইটমেন্ট যে আমার মধ্যে একেবারেই ছিল না তা বলা ভুল। মাস্কারা লাগালাম একটু ঘন করেই। না না, আর কিছু না। একটা প্রেজেনটেব্‌ল লুক তো দরকার, নাকি! তবে সুতপা-বুবাই দের সঙ্গে বেরোলে কেন এ কথা মনে হয় না! ওরা ছোট্টবেলার বন্ধু বলে! ম্যাডক্স স্কোয়ারের আড্ডা তখন চরমে, সাদা শার্ট নীল ডেনিম আমার কানে ফিসফিস করে বললো, “হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে। কাল একবার লেকে মিট করা যায়? সেই বিয়ে বাড়ি থেকে ট্রাই করছি। না বললে শুনবো না কিন্তু।” হার্টবিট ১১০। আচ্ছা এমন বুক চিনচিন করে কেন বলুন তো যখন মাথা আর মন ঝগড়া করে? মাথার শত অ্যালার্টকে মিথ্যে করে, দেখি না কী বলতে চায়, শুনতে মন চলল দশমীর বিকেলে, লেকের ধারে। পৌঁছনোর দু-কিলোমিটার আগেই এসএমএস, “নাহ সামনাসামনি বলার সাহস নেই। অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে। ক্যান ইউ হোল্ড মাই হ্যান্ড? ফর লাইফ?” মোবাইল থেকে চোখ তুলে মনে হল আশেপাশের কিছু লোক হা করে দেখছে আমায়? খেয়াল করলাম আমার মুখটা এক গাল হাসিতে ভরে গেছে কখন, আমার অজান্তেই! অক্সিজেনে এখন নীল পাঞ্জাবি কালো ধুতির গন্ধ। আশেপাশে লুকিয়ে আমায় দেখছে না তো? বাড়ি ফিরে ভাইকে একটা কিল মারবো ভাবছি।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.