রিজওয়ানুর, কে আপনার হয়ে আওয়াজ তুলবে!‌

রক্তিম মিত্র

আজ আপনার কথা খুব মনে পড়ছে। না, আজ আপনার জন্মদিন নয়, এমনকী আপনার মৃত্যুদিনও নয়। দেখতে দেখতে কত বছর পেরিয়ে গেল। সেই যে ছোট্ট একটা মেসেজে বলেছিলেন, মেরে জানে কে বাদ আওয়াজ উঠানা.‌.‌.‌।

rizwanur

এই বার্তা ঠিক কাকে পাঠিয়েছিলেন, জানা নেই। কিন্তু কথাটা প্রায় প্রবাদ হয়ে গিয়েছিল। হ্যাঁ, আওয়াজ উঠেছিল। এতটাই উঠেছিল যে রাজ্য রাজনীতিতে সেটাই বড় ইস্যু হয়ে উঠেছিল। আপনার আত্মহত্যাকে লাগাতার খুন বলে চালানোর চেষ্টা হল। প্রাথমিক তদন্তে বোঝা যাচ্ছে, ওট আত্মহত্যা। শুধু এইটুকু বলেছিলেন বলে একজন পুলিশ কমিশনারকে সরে যেতে হল। অথচ, কোনও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই যাঁরা ক্রমাগত ‘‌খুন খুন’‌ বলে চিৎকার করে গেল, তাঁদের টিআরপি চড়চড় করে বাড়তে লাগল। ক্রমাগত প্রচার করা হল, রাজ্য সরকার খুনি। আপনার মাকে বিভিন্ন সভায় আনা হত। তাঁকে দিয়ে শেখানো বাক্য বলানো হত। কী আশ্চর্য, যিনি এই প্রচারের মূল হোতা, তিনি আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

হঠাৎ, আজ আপনাকে চিঠি কেন?‌ কারণ, আজ সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর এক বছর পূর্তি। ঠিক একইরকম মিথ্যে প্রচার চলেছিল সেই মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরেও। আবার সেই জোর করে খুনের তকমা দেওয়া। নির্লজ্জ প্রচার চালিয়ে গেছে দায়িত্বজ্ঞানহীন তল্পিবাহক মিডিয়া। এত তদন্ত হল। অথচ, এখনও কোর্ট বলতে পারল না যে ওটা খুনের ঘটনা।

আপনার ক্ষেত্রেও ঠিক এমনই হয়েছিল। রাজ্য সরকারকে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হল। পুলিশ কমিশনারকে সরতে হল। মমতা ব্যানার্জিকে মহান করা হল। সিবিআই তদন্তও হল। কিন্তু নিট ফল কী?‌ ওটা যে খুন, সেটা সিবিআই আজও জোর গলায় বলতে পারল না। কে খুন করেছে, সেটা নয় নাই বের হল। কিন্তু খুন না আত্মহত্যা, সেটা বলতেও এত সময় লাগে?‌ তাহলে ওঁরা কীসের তদন্তকারী?‌ সিবিআই ও আদালতকেও যে এই অপদার্থতার দায় নিতে হবে। এই ঘৃণা তাঁদেরও প্রাপ্য।

যাই হোক, সেই প্রিয়াঙ্কা এখন কোথায়?‌ শোনা যায়, লন্ডনে। এতদিনে আপনার নামটাও হয়ত তিনি ভুলে গেছেন। সেই অশোক টোডিই বা এখন কোথায়?‌ শোনা যায়, তিনি এখন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের তালিকায়। আপনার সেই প্রতিবাদী দাদা!‌ তিনি দেখতে দেখতে তিনবার তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক। আপনাকে ভাঙিয়ে কত লোকের উত্থান হয়ে গেল। সত্যিই, সময় কতকিছু চিনিয়ে দিয়ে যায়!‌ যে মানুষগুলো ক্রমাগত আপনার ও আপনার পরিবারের ওপর চাপ তৈরি করে গেছেন, তাঁরা আজ মমতা ব্যানার্জির নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে। অথচ ভিলেন হতে হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে।

তখনও সন্ধে হলেই টিভিতে চণ্ডীমণ্ডপ বসত। মনে আছে, কত সন্ধেতে উত্তাল আলোচনা হয়েছিল আপনার মৃত্যু নিয়ে। আলোচনার নির্যাস সেই একইরকম। আপনি খুন হয়েছেন। আর এর জন্য দায়ী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সরকার। সিবিআই তদন্তের পরেও, দশ বছর মমতার সরকার আসার পরেও প্রমাণ করা গেল না। অথচ, সে নিয়ে আজ আর কোনও উচ্চবাচ্য নেই।

সুশান্তের মতোই আপনাকেও আর ওঁদের প্রয়োজন নেই। আপনাকে বিস্মৃতির অতলে পাঠিয়ে দিতে পারলেই এখন ওঁদের লাভ।

রিজওয়ানুর, আপনার হয়ে আওয়াজ তোলার আজ আর কেউ নেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.