উত্তম কুমার শেষ, বাংলা ছবিও শেষ

বিতর্ক

পক্ষে

রাজেশ্বরী কুণ্ডু, বেঙ্গালুরু

উনিশ শতক বাংলা সিনেমার সুবর্ণযুগ। উত্তম কুমার সেই স্বর্ণযুগের অন্যতম কাণ্ডারী। উত্তম কুমার – বাংলার মহানায়ক , এখনও কুড়ি শতকেও কেউ সেই মহানায়কের ‌শিরোপার অধিকারী হয়নি। আশা করি,আগামি কুড়ি শতকেও হবে না ৷
উত্তম কুমার –যার প্রায় জীবনের প্রতিটি ছবি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম নিদর্শন, আজও সেই ছবিগুলি দেখে মনে হয় না সেগুলি পুরানো বা বর্তমান যুগের সাথে চলে না। বরং মনে হয় সেগুলি এখনকার বাংলা সিনেমাগুলির থেকে অনেক উৎকৃষ্টমানের। উত্তম কুমারের প্রতিটি সিনেমা যতবারই দেখা হোক না কেন সেগুলি কখনও পুরানো হয় না বা দেখার আগ্রহ চলে যায় না ,বরং যতবার দেখি ততবারই নতুন লাগে। যেখানে বর্তমানের প্রায় বেশিরভাগ সিনেমা একবার দেখেই দ্বিতীয়বার তা দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে দর্শক। বর্তমানে জনপ্রিয় বাংলা ছবিগুলিতে গল্পকাররা শিক্ষণীয় চিন্তাভাবনার থেকে আনন্দ উপভোগের দিকে বেশী মনসংযোগ করছেন। ফলে বর্তমানের বাংলা ছবিগুলি তার মান হারিয়ে ফেলছে।বর্তমানে যে ছবিগুলি জনতাকে হাস্যরস প্রদানের জন্যে তৈরী হচ্ছে সেগুলি প্রকৃতপক্ষে অশালীন দৃ্শ্য ও পরকীয়ার উৎস, কোনও মানসিক হাস্যরস প্রদানে সেগুলি ব্যর্থই। কিন্তু উত্তম কুমারের হাসির সিনেমাগুলি ( ছদ্মবেশী , ওগো বধূ সুন্দরী ) যেগুলি দর্শক আজও দেখে তার হাস্যরস থেকে বঞ্চিত হয় না।

uttam kumar5

উত্তম কুমারের চলচ্চিত্রগুলি দেখে মনে হয় যেন এগুলি বাস্তব জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।কিন্তু বর্তমানের বেশিরভাগ ছবিগুলিই (কমার্শিয়াল ছবি) এত অবাস্তব যে মাঝে মধ্যে ভীষণ অসহ্য লাগে।বর্তমানের প্র্রতিটি কমার্শিয়াল ছবিতে প্রচুর টাকায় প্রযোজনা করা হচ্ছে , যেখানে নায়ক-নায়িকারা বিদেশে গিয়ে নৃত্য প্রদর্শন করছে । কিন্তু বাস্তবে এগুলির কোন মূল্যই আসে না- কারণ দর্শক আনন্দ উপভোগ করা ছাড়া কোন নীতিমূলক শিক্ষা পাচ্ছে না এই সমস্ত সিনেমা থেকে।
এক ঘর ভর্তি লোক নিয়ে, ছোট থেকে বড় এমনকি বৃদ্ধ বয়স্কক লোকদের নিয়ে উত্তম কুমারের যে কোন ছবি দেখা যায়, যেখানে বর্তমানের বেশিরভাগ সিনেমায় এত অশালীন ব্যবহার দেখানো হয় যে বড়রা ছোটদের সামনে লজ্জা পেতে বাধ্য হবে।
উত্তম কুমারের প্রতিটি ছবি ভিন্ন স্বাদের , ভিন্ন বার্তার বাহক , যেখান দর্শক প্রতি মূ্র্হূতে নতুন কিছু শিখতে বাধ্য, যেখানে বর্তমানের বাংলা ছবিগুলি তার নিজস্ব চিন্তাভাবনা, সৃষ্টিশীলতা হারিয়ে দক্ষিণ ভারতীয় ছবি বা হিন্দি সিনেমা অনুকরণে ব্যস্ত , যা বাংলা সিনেমার চরম দুর্গতির প্রমাণ। একসময় হিন্দি সিনেমা বাংলাকে অনুকরণ করত , এখন তার উল্টোটা হচ্ছে। অনুকরণ নয় , নতুন কিছু উদ্ভাবন ছিল বাংলার চলচ্চিত্র প্রগতির স্বরূপ, যা প্রায় চলে গেছে বর্তমান বাংলা সিনেমাগুলি থেকে।
উত্তম কুমারের সিনেমার গান আজও মানুষের মনকে দোলা দেয় (সপ্তপদী : এই পথ যদি না শেষ হয় ,তবে কেমন হত তুমি বলত )।কিন্তু বর্তমানের বাংলা সিনেমার গানগুলির কয়েকবার শুনেই আর ভালো লাগে না। কারণ এুগুলিতে এত অন্য ভাষার শব্দ ব্যবহৃত হচ্ছে যে বাংলা ভাষা তার নিজস্ব হারিয়ে ফেলছে ,হারিয়ে ফেলছে তার নিজস্ব মাধুর্য্য যা সত্যি দুঃখনীয় ।
তাই বাংলার শিল্পীদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ , উত্তম কুমার বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যে গর্ব তৈরী করছেন তা খর্ব করবেন না। বাংলার এই গরিমাকে বাঁচিয়ে রাখুন বিশ্বের দরবারে। তাতে বাংলার মান অক্ষুণ্ণ থাকে সকলের কাছে । আশা করি , বেঙ্গল টাইমসের পাঠকরাও এই ইচ্ছে প্রকাশ করছে ।।

বিপক্ষে
সৈকত দাশগুপ্ত, পুণে

এই বিতর্কের বিষয়ের সঙ্গে একেবারেই একমত নই। তাই আমি বিরুদ্ধেই কলম ধরলাম। শুধু বিরোধীতা করতে হবে, তাই বিরোধীতা, এমন নয়। মন থেকে যেটা বিশ্বাস করি, সেটাই লিখছি।
উত্তম কুমারকে ছোট করার ইচ্ছে আমার নেই। তাঁকে আর দশজনের মতো আমিও শ্রদ্ধা করি। অন্তত পঞ্চাশখানা ছবি দেখেছি। কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে থাকি। যে কয়েকজন বাঙালির কথা গর্ব করে ভিনরাজ্যের বন্ধুদের কাছে বলি, উত্তম কুমার অবশ্যই তাঁদের একজন।

uttam kumar3

কিন্তু উত্তম কুমার মারা যাওয়ার পর আর ভাল বাংলা ছবি হয়নি, এটা মানতে পারছি না। যাঁরা বলেন, উত্তম কুমারের পর ভাল ছবি হয়নি, তাঁদের উপর আগে রাগ হত। এখন করুণাই বেশি হয়। তাঁরা বোধ হয় এখনকার ছবি দেখেননি। এমনকি কথা বলে বুঝেছি, উত্তমের ছবিও খুব বেশি দেখেননি। বলতে হয়, তাই বলেন।
উত্তম কুমার সময়ের দাবি বুঝতেন। তাই নিজেকে নায়ক থেকে চরিত্রাভিনেতা করে তুলেছিলেন। এক গন্ডিতে আটকে থাকেননি। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন, নিশ্চয় ঋতুপর্ণ ঘোষ, কৌশিক গাঙ্গুলিদের সঙ্গে কাজ করে তৃপ্তি পেতেন। তাই, উত্তমের প্রশংসা করুন। কিন্তু নতুনদের ছোট করবেন না।

###

(
বিতর্কের বিষয় ছিলঃ উত্তম কুমার শেষ, বাংলা ছবিও শেষ।
বেশ কয়েকটি চিঠি এসেছে। কোনওটি সুদীর্ঘ, কোনওটি একেবারেই তিন চার লাইনের। আবার কেউ একইসঙ্গে পক্ষে-বিপক্ষে দুরকম যুক্তিই দিয়ে বসে আছেন। সবমিলিয়ে কয়েকটি লেখা নির্বাচিত হয়েছে। আগামী কয়েকদিনে তা প্রকাশ করা হবে।
আজ দুটি লেখা প্রকাশ করা হল। দুটিই এসেছে ভিনরাজ্য থেকে। বা, বলতে পারেন, ভিনরাজ্য বলে এই দুটি চিঠিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হল।

আগামী সাত দিন ধরে উত্তম সপ্তাহ চলবে। চাইলে এখনও লেখা পাঠাতে পারেন। বাংলা ওয়ার্ডে কম্পোজ করে পাঠালে ভাল হয়। একান্তই না পারলে রোমান হরফেও পাঠাতে পারেন। চেষ্টা করুন অন্তত দুশো শব্দ লিখতে। তবে চারশোর বেশি না হয়, সেদিকেও নজর রাখবেন।
লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ bengaltimes.in@gmail.com )

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.