পাহাড়–‌সমুদ্র থাক, জেল থেকেই ঘুরে আসুন

স্বরূপ গোস্বামী

অনেক জায়গায় গিয়েছেন। কিন্তু আপনি কখনও জেলে যাননি। মনে মনে কোনও আক্ষেপ আছে?‌ যদি থাকে, সেই আক্ষেপ মিটিয়ে নেওয়ার সুযোগ আপনার সামনে। না, এর জন্য কোনও অপরাধ করতে হবে না। পুলিশের খাতায় আপনার নাম উঠবে না। চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়বে না। লোকলজ্জার ভয়ও নেই। চাইলেই একটা বা দুটো রাত জেলভ্রমণে কাটিয়ে আসতে পারেন?‌

জেল ভ্রমণ?‌ শুনতে খটকা লাগতেই পারে। শখ করে আবার কেউ জেলে যায় নাকি?‌ বরং জেলযাত্রা এড়াতে উকিলের পেছনে কত টাকা বেরিয়ে যায়!‌ একবার জেলে গেলেই সারা জীবনের কলঙ্ক। চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা। সত্যি করে বলুন তো, জেলের ভেতর কী হয়, সে সম্পর্কে আমাদের কতটুকু ধারণা আছে?‌ সিনেমায় জেলের ভেতর দু–‌একটা দৃশ্য হয়তো দেখেছি। জরাসন্ধের দু–‌একটা বইয়ে হয়ত পড়েছি। একটা আবছা আবছা ধারণা পেয়েছি। কিন্তু জেলে কাটানোর সুযোগ কতজনের হয়েছে?‌

sangareddy jail4

আপনার জন্য সেই সুযোগ এনে দিয়েছে তেলেঙ্গানা সরকার। তাঁদের পর্যটনের আওতায় জেলখানাকেও আনা হয়েছে। সি ট্যুরিজম, জঙ্গল ট্যুরিজম, রিভার ট্যুরিজম, হোম ট্যুরিজম, ভিলেজ ট্যুরিজম— এমন নানা শব্দ শুনেছেন। কিন্তু জেল ট্যুরিজমের কথা কখনও শুনেছেন?‌ তেলেঙ্গানা সরকারের সৌজন্যে এবার আপনার সামনেও এসে গিয়েছে জেলে থাকার সুযোগ। চাইলে টিকিট কেটে জেল দেখে আসতে পারেন। কয়েদিদের সঙ্গে কথা বলে আসতে পারেন। রাতে থাকতে চান?‌ সেই ব্যবস্থাও আছে?‌ মাথাপিছু খরচ মাত্র পাঁচশো টাকা। আপনাকে দেওয়া হবে কয়েদিদের পোশাক। তাঁদের সঙ্গেই খাওয়ার সুযোগ। চাইলে তাঁদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতে পারেন। আপনাকে গাইড করার জন্য কয়েদিদের কয়েকজনকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই সবকিছু ঘুরিয়ে–‌ফিরিয়ে দেখাবেন।

sangareddy jail2

কোন জেল, সেটা এই ফাঁকে বলে নেওয়া যাক। মেদক জেলার সাঙ্গারেড্ডি জেলে এই অভিনব আয়োজন। খাবারের তালিকায় ব্রেকফাস্টে রুটি। লাঞ্চে অড়হর ডাল ও রসম বা লাল গম ও রসম। ডিনারে থাকে কারি, রসম ও দই। সেলে চা দেওয়া হয় দুবার। সকাল ৬টা থেকে ৬.৩০টা ও বিকেল ৪.৩০টে থেকে ৫টা। চা বানানো হয় জেলের মধ্যেই। বাকি খাবার আসে কান্ডি জেল থেকে। ব্রেকফাস্ট ৭টা থেকে ৭.৩০টার মধ্যে চলে আসে, লাঞ্চ ১০.৩০টা থেকে ১১টার মধ্যে। কয়েদিদের মতোই দেওয়া হবে স্টিলের থালা, গ্লাস। শুতে হবে মেঝেতেই। তবে আলাদা বিছানা–‌বালিস থাকবে। গরমে যেন কষ্ট না হয়, সিলিং পাখা থাকছে। জেলের কয়েদিদের সঙ্গে টিভি দেখতে পারেন। চাইলে লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশোনাও করতে পারেন। তবে একবার ঢুকলে বাইরে যাওয়ার দরজা কিন্তু বন্ধ। ইচ্ছেমতো বেরিয়ে আবার ঢুকে পড়া যাবে না। স্মার্টফোন নিয়ে ইচ্ছেমতো সেলফিও তোলা যাবে না। ফোন রেখেই ভেতরে ঢুকতে হবে।

স্বাধীনতার জন্য জেলে গেলে গৌরব বাড়ত। এখন তো খুনখারাপি বা কেলেঙ্কারি করে লোকজন জেলে যাচ্ছে। কিন্তু আপনি জেলেও যাবেন, অথচ নিষ্কলঙ্কও থাকবেন। ফিরে এসে বন্ধুদের কাছে জেলের গল্প শোনাতে পারবেন। নিদেনপক্ষে ফেসবুকে জেলভ্রমণ নিয়ে দারুণ লেখা লিখতে পারেন। অনেক ‘‌লাইক’‌ পেয়ে যাবেন। অনেক ভাল বন্ধুও পেয়ে যেতে পারেন।
তাহলে কী ভাবছেন?‌ একবার জেল থেকে ঘুরে এলে মন্দ হয় না। আচ্ছা, আমাদের রাজ্যে এমনটা করা যায় না?‌ দিদিমণি ভেবে দেখতে পারেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.