দিব্যেন্দু দে
সেদিন নন্দন চত্বরে গিয়েছিলাম। যে দৃশ্য দেখলাম, সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম। তার আগে বেঙ্গল টাইমসের একটা লেখায় পড়েছিলাম। ঠিক বিশ্বাস হয়নি। মনে হয়েছিল, অতিরঞ্জিত। এখানে তো মাঝে মাঝেই দিদির নামে কুৎসা করা হয়ে, ভাবলাম, এটাও হয়ত তেমন কিছু।
নন্দন কে বানিয়েছেন ? মমতা ব্যানার্জি। রবীন্দ্র সদন কে বানিয়েছেন ? মমতা ব্যানার্জি। কলকাতা তথ্যকেন্দ্র, গগণেন্দ্র চিত্র প্রদর্শনশালা, শিশিরমঞ্চ — এগুলো কে বানিয়েছেন ? কেন, মমতা ব্যানার্জি। ভাবছেন ইয়ার্কি করছি। প্রিয় পাঠক, প্লিজ একবার নন্দন চত্বর থেকে ঘুরে আসুন। তাহলেই জানতে পারবেন, তিনি কী কী করেছেন।
সব জায়গায় ইয়াব্বড় ফলক— নবরূপে সজ্জিত নন্দনের উদ্বোধন করলেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ‘নবরূপে সজ্জিত’ কথাটা অনেক ছোট হরফে লেখা। অনেক প্রকল্প তিনি নিজের নামে চালিয়ে নিচ্ছেন, এটা শোনা যায়। তাই বলে নন্দনটাও দখল করে নিতে হবে ? ওই ফলকটা বসানোর আগে বা উন্মোচনের আগে একবার হাত কাঁপল না ? নবরূপ মানেটা কী ? হয়ত রঙ হয়েছে । দু একটা রেলিং ভাঙা হয়েছে। নন্দন টু তে নতুন কিছু চেয়ার বসানো হয়েছে। তাই বলে এতবড় সাইজের ফলক বসিয়ে দিতে হবে? নন্দনের বাইরে যে দুটি ফলক আছে, লক্ষ্য করে দেখবেন, সেখানে কোথাও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর নাম নেই। এখানেই তফাত। শিক্ষা ও অশিক্ষার তফাত। রুচির তফাত। নন্দন তৈরি হওয়ার পর তা জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য উদ্বোধন করেননি। উদ্বোধন করেছিলেন সত্যাজিৎ রায়। সেই ফলকই রাখা আছে। সত্যজিৎ রায়ের ফলকের চারগুন সাইজে মমতা ব্যানার্জির ফলক। যে কোনও দিন সত্যজিৎ রায়ের নামাঙ্কিত ফলক খুলে ফেললেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
একই ঘটনা রবীন্দ্র সদন, শিশির মঞ্চ, তথ্যকেন্দ্র, গগনেন্দ্র চিত্র প্রদর্শনশালা, চারুকলা পর্ষদসহ ওই চত্বরের সমস্ত ভবনে। কী অবলীলায় ওইসব ফলক টাঙিয়ে দেওয়া হল। কোনও মহলে কোনও টুঁ শব্দ দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। রাজ্যে এত প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবী, কই তাঁরা তো এই নিয়ে কোনও বিবৃতি দিয়েছেন বলে মনে পড়ছে না।
সুবোধ সরকার থেকে নচিকেতা, শুভাপ্রসন্ন থেকে কবীর সুমন, শাঁওলি মিত্র থেকে প্রসেনজিৎ, অপর্ণা সেন থেকে যোগেন চৌধুরি, রঞ্জিত মল্লিক থেকে ব্রাত্য বসু— এই ব্যাপারে আপনাদের মতামতটা জানাবেন? কেউ এই বিষয়ে তাঁদের মনের কথা বলতে পারবেন না। কারণ, বললে কী কী হতে পারে, তাঁরা বেশ ভালভাবেই জানেন।
সবই যখন তিনি করেছেন, তখন একটা কাজ করুন। হাওড়া ব্রিজে একটু রঙ করে দিন বা টুনি বাল্ব লাগিয়ে দিন। তারপর সেখানেও বড় একটা ফলক টাঙিয়ে দিন, নবরূপে নির্মিত হাওড়া ব্রিজের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। যে আমলা এই ফলক টাঙাবেন, তাঁর প্রোমোশন নিশ্চিত। সেইসঙ্গে আরও একটা বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন, হাওড়া ব্রিজের উদ্বোধন করতেও মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ঠিক রাজি হয়ে যাবেন।