রক্তিম মিত্র
সমুদ্র সৈকতে কেন গাড়ি নামল ? পুলিশের কি কোনও গাফিলতি ছিল ? এই নিয়ে কত লোকের কত না প্রশ্ন। কিন্তু কেন এই দুর্ঘটনা, তার আসল কারণ আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
কেন মন্দারমণির বিচে গাড়ি চলছে, এই নিয়ে হইচই করলে আসল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়। কেউ কেউ হয়ত সেটাই চাইছেন। গাড়িটা বড় সমস্যা নয়। এই দুর্ঘটনা তো বিচে না হয়ে রাস্তাতেও হতে পারত। আসল কারণ হল, মদ্যপ অবস্থায় এই গাড়ি চালানো হচ্ছিল।
কোনও সমীক্ষা না করেই বলা যায়, যাঁরা জোর করে বিচে গাড়ি চালাতে যান, তাঁদের অধিকাংশই মদ্যপ। পেটে ওই সুরা না পড়লে এমন আজগুবি ইচ্ছেও হবে না। সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে যাওয়ার খবর হামেশাই কাগজে বেরোয়। কখনও কিশোর, কখনও তরুণ, কখনও মাঝবয়সী। কিন্তু একটা বিষয়ে অদ্ভুত মিল। প্রায় সবাই মদ খেয়েই এই বীরত্ব দেখানোর চেষ্টা করেন। মদ খায় না, অথচ তলিয়ে গেছে, এমন ঘটনা কটা আছে, খুঁজে বের করুন। খুব একটা উদাহরণ পাবেন না। বড়জোর দু-একটা ব্যতিক্রম থাকতে পারে।
যাঁরা বেড়াতে যাচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশ কেবল মদ খেতেই বেড়াতে যাচ্ছেন। সেটাই যেন একমাত্র উদ্দেশ্য। যে কোনও হোটেলে গিয়ে এই সমীক্ষা করুন। তাহলেই চিত্রটা বেরিয়ে আসবে। সন্ধে হলেই সমুদ্রের পাড়ে সবাই বসে গেলেন। শ্বশুর-জামাই কী অদ্ভুত মৈত্রী, মা-মেয়ে একসঙ্গেও দিব্যি পান করছেন। হয়ত বিশ্বাস হবে না। কিন্তু নিজের চোখেই দেখে আসুন।
না, এদিকে আমরা কেউ আলো ফেলছি না। কেন বিচে গাড়ি নামাল, সেই নিয়েই আমরা সোচ্চার। যে কোনও সংস্থা, যে কোনও দিন গিয়ে সমীক্ষা করুন। মদ্যপ টুরিস্টের সংখ্যাটা আশি শতাংশ ছাপিয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। তারাই কেউ জলে নেমে তলিয়ে যাচ্ছে, কেউ বিচে বাইক নামিয়ে দিচ্ছে, কেউ নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে।
হোটেল মালিকরাও কিছু বলে না, কারণ মদ খাওয়া বন্ধ করলে টুরিস্ট আসাই বন্ধ হয়ে যাবে। প্রশাসনও নির্বিকার। কারণ, ব্যবস্থা নিতে গেলে অনেক বিপদে পড়তে হবে। তাছাড়া, নিজেরা খেলে অন্যদের বারণ করাও যায় না।
কয়েকদিন আমরা সবাই নড়ে চড়ে বসব। কেন গাড়ি নামল, তা নিয়ে হইচই করব। কোনও গাড়ি নেমে গেলে, তার ছবি আপলোড করব। কিন্তু আসল সমস্যা আড়ালেই থেকে যাবে।
