প্রয়োজনে দল ছাড়তে পারেন অধীর

অপূর্ব রায়
তাঁ জেলায় তিনিই শেষ কথা। দিল্লির নির্দেশ, রাজ্যের ফতোয়া, সবকিছুকেই তিনি বারবার উপেক্ষা করেছেন। তিনি হেঁটেছেন নিজের রাস্তায়। এবারও নিজের রাস্তাতেই হাঁটতে চান অধীর চৌধুরি। তার জন্য প্রয়োজনে কংগ্রেস ছাড়তেও দ্বিধা করবেন না। ঘনিষ্টমহলে এমনই বার্তা দিয়েছেন বহরমপুরের সাংসদ।
বিধানসভা নির্বাচনে তিনি প্রকাশ্যেই জোট চাইছেন বামেদের সঙ্গে। এই ব্যাপারে কোনও রাখঢাক করছেন না। তাঁর সাফ কথা, ‘এত লুকোছাপার কী আছে ? কর্মীরা বামেদের সঙ্গে জোট চাইছে। এছাড়া তৃণমূলকে হারানো যাবে না। এটাই তো দিল্লি নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কর্মীদের এই আবেগটাই তুলে ধরতে চেয়েছি। এর মধ্যে তো কোনও অন্যায় নেই।’
কিন্তু হাইকমান্ড যদি তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে ? প্রকাশ্যে না বললেও, ঘনিষ্টমহলে তিনি বলছেন, কোনও ভাবেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট তিনি মানবেন না। যদি দিল্লি উপর থেকে জোট চাপিয়েও দেয়, ভেতরে ভেতরে কর্মীরা নিজেদের পছন্দের জোট করে নেবেন। তিনি নিজে তৃণমূলের হয়ে কোনও প্রচার করবেন না। এর জন্য যদি চূড়ান্ত শাস্তিও পেতে হয়, মাথা পেতে নেবেন। নিজের অনুগামীদের হয়ে প্রকাশ্যেই প্রচার করবেন।

adhir2

এই বিদ্রোহ অবশ্য নতুন নয়। ২০০১। সেবার শেষমুহূর্তে তৃণমূলের সঙ্গে জোট হয়েছিল কংগ্রেসের। নওদাও হরিহরপাড়া ছাড়া হয়েছিল তৃণমূলকে। তিনি দু জায়গায় দুই নির্দল দাঁড় করালেন। নওদা থেকে জিতিয়ে আনলেন আবু তাহেরকে, হরিহরপাড়া থেকে জিতিয়ে আনলেন নিয়ামত শেখকে।
২০০৬ সেবার তিনি জেলা কংগ্রেস সভাপতি। সেবার কংগ্রেস অবশ্য একাই লড়েছিল। কিন্তু অধীর দাবি করলেন, বহরমপুরে মায়ারানী পাল ও কান্দিতে অতীশ সিংহকে টিকিট দেওয়া চলবে না। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস এই দুই বিধায়ককে টিকিট দেয়। এবারও কংগ্রেসের সরকারির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দুই নির্দলকে দাঁড় করিয়ে দিলেন অধীর। বহরমপুর থেকে জিতিয়ে আনলেন মনোজ চক্রবর্তীকে, কান্দি থেকে জিতলেন অপূর্ব সরকার।
নির্দল দাঁড় করিয়ে তিনি জিতিয়ে আনতে পারেন, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। এবারও প্রয়োজনে সেই রাস্তা নিতে পারেন। তাঁর সাফ কথা, তৃণমূলের সঙ্গে জোট কোনও অবস্থাতেই কর্মীরা মেনে নেবে না। কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে আমার উচিত সোচ্চার হয়ে এই কথা জানানো। সেটাই জানাচ্ছি।
১ ফেব্রুয়ারি রাজ্য কং নেতাদের দিল্লিতে ডেকেছেন রাহুল গান্ধী। রাহুল ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাজ্য কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। তবু, কংগ্রেসে অনেকেই মনে করছেন, জাতীয় রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় কংগ্রেস হাইকমান্ড হয়ত তৃণমূলের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চাইবে না।
কংগ্রেস একলা লড়ার সিদ্ধান্ত নিলে, সেক্ষেত্রেও তলে তলে বামেদের সঙ্গে জোটের চেষ্টা চলবে। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে জোটে গেলে রাজ্য কংগ্রেসের অনেকেই বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারেন। সেই তালিকায় সামনের দিকেই থাকবে অধীর চৌধুরির নাম। নিজের বিধায়কদের নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে তিনি যদি আলাদা করে বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেন, অবাক হওয়ার কিছু নেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.