ধন্যবাদ ভূমিকম্প

মহুয়া ভট্টাচার্য

আমি থাকি বেহালায়। প্রথমটায় কিচ্ছু বুঝতে পারিনি। আমার চার বছরের ছেলেও বোঝেনি। ওর বোঝার কথাও নয়। আমার শাশুড়ি বললেন, আলমারিটা নড়ছে। শুরুতে বিশ্বাস করিনি। পরে বুঝলাম, সত্যিই নড়ছে।

bhumikampa5

আমরা এক তলায় থাকি। প্রথমে মনে হল, ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে যাই। কিন্তু শাশুড়ি! এই শরীর নিয়ে তিনি তো নামতে পারবেন না। তাঁকে ফেলে রেখে বেরিয়ে যাব ? ব্যাপারটা সত্যিই খুব খারাপ হত। নিজের স্বামীকে কী মুখ দেখাব ? মনে হল, যা হয়, হোক। মরলে সবাই একসঙ্গেই মরব। মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম।

মা বলল, যাও, তোমরা নিচে চলে যাও। বললাম, না, আপনাকে একা ফেলে দিয়ে যাব না। যা হয় হোক।

কয়েকদিন ধরেই কিছু কিছু ব্যাপারে মন কষাকষি চলছিল। শাশুড়ি-বউয়ের সম্পর্ক যেমন হয়! যখন থেমে গেল, জানালা দিয়ে দেখলাম, অনেকে রাস্তায় নেমে গেছে। শাশুড়িও সেই দৃশ্য দেখলেন। বললেন, আর ভয় নেই। আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।

অনেক ভুল বোধাবুঝি, সম্পর্কের মাঝে জমে থাকা অনেক মেঘ যেন এক নিমেশে সরে গেল। দুজনের তখন চোখ ছলছল। আমার চার বছরের ছেলে দেখল, মা আর ঠাকুমা দুজনেই কাঁদছে।

ধন্যবাদ ভূমিকম্প, তুমি অনেক ফাটল ধরিয়েছো। কিন্তু নিজের অজান্তে অনেক ফাটলকে জোড়াও লাগিয়ে দিলে।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.