উত্তরসূরীকে ঠিক চিনেছিলেন দেশবন্ধু

  1. বয়সের ব্যবধান অনেকটাই। কখনও তাঁরা একে অন্যের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা। কখনও যেন গুরু–শিষ্য। আবার কখনও পিতা–পুত্র। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও নেতাজি সুভাষচন্দ্রের সেই সম্পর্কে আলো ফেললেন স্বরূপ গোস্বামী।
    নেভিল কার্ডাস বলতেন, স্কোরবোর্ড একটি গাধা। কে কত রান করল, তা দিয়ে ম্যাচের ছবি স্পষ্ট হয় না। একটা দর্শনীয় শট বা দর্শনীয় ইনিংস স্কোরবোর্ডে লেখা থাকে না। সন্দেহ নেই, স্কোরবোর্ডের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। ইতিহাসের সাল–তারিখ নিয়েও নিশ্চয় এমন অনেক রসিকতা চালু আছে। কিন্তু সাল, তারিখ একটা ঘটনা পরম্পরার ছবি এঁকে দিয়ে যায়। ইতিহাস সাল–তারিখ সর্বস্ব নয়, আবার সাল–তারিখ বর্জিতও নয়।

এই লেখার বিষয় দুই মহান দেশপ্রেমিকের পারস্পরিক সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের নানা চড়াই–উতরাই। দেশবন্ধু কখনও আদর্শে কঠোর তো কখনও স্নেহশীল পিতা। কখনও একসঙ্গে কারাগারে, কখনও লড়াইয়ের ময়দানে, আবার কখনও কর্পোরেশনের কর্মযজ্ঞে। কখনও নির্দেশ দিচ্ছেন, আবার কখনও পরম স্নেহে সুভাষের কথাতেই সায় দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাটিয়েছেন, এমনও নয়। কাছাকাছি থাকার সময়টা বড়জোর বছর চারেক। সেই সময়টাও যে নিরবচ্ছিন্ন, এমন নয়। একে অন্যের থেকে লম্বা সময় ধরে বিচ্ছিন্ন থেকেছেন। তবু, এই চার বছরের সম্পর্কই থেকে যাবে ভবিষ্যতে ইতিহাসের উপাদান হয়ে।

সুভাষের জন্মসালটা মনে করুন। ১৮৯৭। ঠিক সে বছরই চিত্তরঞ্জনের বিয়ে হয় বাসন্তীদেবীর সঙ্গে। চিত্তরঞ্জনের বয়স তখন সাতাশ বছর। বিলেত–পর্ব শেষ করে তখন তিনি মোটামুটি বেশ প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী। পরের বছর, অর্থাৎ ১৮৯৮–এ চিত্তরঞ্জনের বড় মেয়ে অপর্ণাদেবীর জন্ম। পরের বছর (‌১৮৯৯)‌ একমাত্র ছেলে চিররঞ্জনের জন্ম। তার দু’বছর পর (‌১৯০১)‌ ছোট মেয়ে কল্যাণীর জন্ম। অর্থাৎ, দেশবন্ধুর বড় মেয়ে সুভাষের থেকে এক বছরের ছোট। সেই হিসেবে দেশবন্ধুকে নেতাজির পিতৃতূল্য বলাই যায়। যদিও পারিবারিক সম্পর্ক ছিল না। দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ কখন? প্রেসিডেন্সিতে ওটেন সাহেবের আচরণের প্রতিবাদ করে বহিষ্কৃত হলেন সুভাষ। তখন বন্ধুদের নিয়ে আইনি পরামর্শের জন্য তিনি ছুটে গিয়েছিলেন চিত্তরঞ্জনের কাছেই। তখন থেকেই সুভাষকে একটু অন্য নজরে দেখতে শুরু করলেন চিত্তরঞ্জন। তখনও পর্যন্ত তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী, দেশবন্ধুর স্বীকৃতি তারও অনেক পরে।

deshbandhu

এর মধ্যে স্কটিশ চার্চে পড়াশোনার পর্ব শেষ করে সুভাষও পাড়ি দিলেন কেমব্রিজে। আই সি এস পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে চাইলে অনায়াসে ব্রিটিশদের মোটা মাইনের চাকরিতে যোগ দিতে পারতেন। সারাজীবন স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার সেই প্রলোভন ও হাতছানিকে সুভাষ উপেক্ষা করলেন, তা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু কেন? ১৯২১ সালে সুভাষচন্দ্র তাঁর মেজদা শরৎচন্দ্র বসুকে লিখছেন —
‘‘আমি স্পষ্ট বুঝিতে পারিতেছি যে আমি দুই পথের সংযোগস্থলে উপস্থিত। মধ্য পথ আশ্রয় করিবার কোন উপায় নাই। হয় আমাকে এই গলিত চাকুরীর মায়া ছাড়িয়া সর্বান্তঃকরণে দেশের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করিতে হইবে, নয় সমস্ত আদর্শ আকাঙ্খা জলাঞ্জলি দিয়া সিভিল সারভিসের কক্ষপুটে সমাধি লাভ করাই আমার ভবিষ্যৎ বলিয়া মানিতে হইবে।’’

ঠিক সেই বছরেই আইনব্যবসা ছেড়ে দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করলেন চিত্তরঞ্জন। বিলাস ও বৈভবের জীবন ছেড়ে স্বেচ্ছায় বেছে নিলেন একেবারে অনাড়ম্বর ও কষ্টকর জীবন। চিহ্নিত হলেন দেশবন্ধু হিসেবে। আত্মত্যাগের সেই ঢেউ পৌঁছে গেল সুদূর ইংল্যান্ডেও। সুভাষচন্দ্রের মনে যেটুকু দ্বিধা–দ্বন্দ্ব ছিল, তা–ও যেন দূর হয়ে গেল। মেজদা শরৎচন্দ্রকে সুভাষ লিখছেন,
‘‘যদি এই বয়সে চিত্তরঞ্জন সংসারের সবকিছু ছাড়িয়া জীবনের অনিশ্চয়তার ভূমিতে আসিয়া দাঁড়াইতে পারেন, তবে আমার সাংসারিক সমস্যাবিহীন তরুণ জীবনে এ ক্ষমতা আরো অধিক, চাকুরী ছাড়িলেও আমার কাজের বিন্দুমাত্র অভাব ঘটিবে না।’’

তখন না ছিল ইন্টারনেট, না ছিল টেলিভিশনের ব্রেকিং নিউজ। তবু একজনের আত্মত্যাগ সুদূর ইংল্যান্ডেও আরেকজনকে কীভাবে আলোড়িত করেছিল! চিত্তরঞ্জন সব ছেড়ে পথে এসে না দাঁড়ালে হয়ত সুভাষও থেকে যেতেন আই সি এসের নিশ্চিত চাকরির আশ্রয়ে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, দেশে ফিরে ইংরেজদের মোটা মাইনের চাকরি নয়। দাঁড়াবেন দেশবন্ধুর কর্মযজ্ঞের পাশে। ১৯২১–এর ১৬ ফেব্রুয়ারি চিঠি লিখলেন দেশবন্ধুকে —
‘‘বাংলাদেশে দেশমাতৃকার সেবাযজ্ঞে আপনি প্রধান ঋত্বিক তাই আপনাকে এই চিঠি লিখছি। …দেশমাতৃকার চরণে আমার এই দেহ ও মন ছাড়া উৎসর্গ করিবার কিছুই নাই। আপনার সম্মতি ও আদেশের অপেক্ষায় আমি প্রস্তুত।’’

নেতাজি দেশে ফিরলেন ১৯২১–এর জুলাই মাসে। বম্বেতে নেমে প্রথমেই দেখা করলেন মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে। কীভাবে দেশের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন, সে বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হল। ইংল্যান্ড থেকে আসার আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন, কলকাতায় ফিরে সবার আগে যাবেন দেশবন্ধুর কাছে। গান্ধীজিও সেই পরামর্শই দিলেন তরুণ সুভাষকে। কলকাতায় ফিরেই দেশবন্ধুর বাড়িতে হাজির। কিন্তু তিনি সেই সময় কলকাতায় ছিলেন না। বাসন্তীদেবী সুভাষকে পুত্রস্নেহে বরণ করে নিলেন। কয়েকদিন পর কলকাতায় ফিরলেন দেশবন্ধু। এবার গিয়ে দেখা করলেন সুভাষ। ফিরে এসে সেই সাক্ষাতের অনুভূতি কেমন ছিল? নেতাজির লেখা থেকেই জেনে নেওয়া যাক।
‘‘আজও তাঁর বিরাট মূর্তি আমার চোখের সামনে ভাসছে। কলকাতা বারের নেতা যে মিঃ দাশের কাছে আমি রাজনৈতিক কারণে কলেজ থেকে বিতাড়িত ছাত্ররূপে পরামর্শ নিতে এসেছিলাম এঁকে সেই লোক মনে হল না। যে মিঃ দাশ দিনে দশ হাজার টাকা আয় করতেন ও এক ঘন্টায় হাজার টাকা খরচ করতেন, এঁকে সেই লোকও মনে হল না। তাঁর বাড়ীতেও এখন আর সেই রাজপ্রাসাদের জৌলুস নাই। কিন্তু যে মিঃ দাশ সবসময় তরুণের বন্ধু ছিলেন, তরুণের আশা আকাঙ্খা যিনি বুঝতেন তাদের দুঃখে সমবেদনা জানাতেন—ইনি সেই মিঃ দাশ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম এই একটি মানুষ যিনি তাঁর উদ্দেশ্য ও কর্মপদ্ধতি জানেন এবং বোঝেন। তিনি তাঁর সর্বস্ব দান করেছেন এবং অপরের সর্বস্ব দাবী করার অধিকারও অর্জন করেছেন। যাঁর কাছে তারুণ্য কোনও ত্রুটি নয়, বরং একটি গুণ। তাঁর সঙ্গে কথা শেষ হল। আমিও মনস্থির করতে পারলাম। আমি বুঝলাম এতদিনে একজন নেতার সাক্ষাৎ পেয়েছি এবং আমি তাঁকেই অনুসরণ করতে চাই।’’

শুরু হল নতুন পথ চলা। চার বছরের সেই বিস্তারিত ইতিহাস লেখার পরিসর এখানে নেই। তাই ঘটনাক্রমকে একটু ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখা। দেশবন্ধুর সঙ্গেই নানা গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন সুভাষ। সঙ্গে কিরণশঙ্কর রায়, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ। আরও জোরদার হল অসহযোগ আন্দোলন। ইংরেজদের তৈরি কলেজ নয়, ঝাঁকে ঝাঁকে ছাত্ররা বেরিয়ে এল দেশি কলেজে পড়বে বলে। চিত্তরঞ্জন প্রতিষ্ঠা করলেন গৌড়ীয় সর্ববিদ্যায়তন। আর প্রিয় শিষ্য সুভাষের হাতে তুলে দিলেন সেই কলেজের ভার। সুভাষ হলেন সেই কলেজের অধ্যক্ষ। এ এক অন্য জীবন। কখনও পড়াচ্ছেন ইংরেজি, কখনও ভূগোল, কখনও দর্শন। এরই মাঝে জীবনের আরেক অধ্যায়। আইন অমান্যে যোগ দিয়ে কারাবরণ। সুভাষ আর দেশবন্ধু একসঙ্গে জেলের ভেতর। এভাবে মাস ছয়েক কাটল। জেলের ভেতর একে অন্যকে আরও ভালভাবে জানতে, বুঝতে পারলেন। কখনও ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা, কখনও রসিকতা। কখনও গুরুশিষ্য, তো কখনও দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জেলের খাবার ঠিক পছন্দ হত না দেশবন্ধুর। দিনের বেলা বাসন্তীদেবীর রান্না করা খাবার খেলেও রাতে রান্না করার দায়িত্ব ছিল সুভাষের ওপর। অবশ্য সুভাষ নিজেই এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। দেশবন্ধু ঠাট্টা করে বলতেন, সুভাষ খুব ভাল নার্স।

জেলে এবং বাইরে দু–একটি রসিকতার কথা বরং এই সুযোগে তুলে ধরা যাক। দেশবন্ধুর বাড়িতে মাঝে মাঝেই যেতে হত সুভাষকে। বাসন্তীদেবীও তাঁকে নিজের ছেলের মতোই স্নেহ করতেন। এটা অনেকেই জানতেন। এমন সুপাত্রকে কোন মেয়ের বাবা হাতছাড়া করতে চায়! কিন্তু সুভাষকে বিয়ের কথা বললে, এককথায় প্রত্যাখ্যান। তাহলে, কাকে ধরা যায়! কেউ ধরতেন দেশবন্ধুকে। আবার কেউ ধরতেন বাসন্তীদেবীকে। ওদিকে সুভাষও অনঢ়, বিয়ে করবেন না। শেষমেশ এক বিত্তশালী বাবা প্রস্তাব দিলেন, সুভাষের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে হলে তিনি একলাখ টাকা যৌতুক দিতে রাজি। তখনকার দিনে একলাখ টাকার অঙ্কটা মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু সুভাষকে এই কথা বলবেন কে? একদিন রাতে দেশবন্ধুই কথাটা পাড়লেন, তবে একটু অন্যভাবে। সুভাষকে খুব গম্ভীরভাবে বললেন, এক ভদ্রলোক আমাদের ফান্ডে এক লাখ টাকা দেবেন বলে ঠিক করেছেন। সুভাষ বেশ উৎসাহী। একইসঙ্গে আনন্দিত। টাকাটা কীভাবে সংগঠনের কাজে লাগানো যায়, সেই পরিকল্পনাও করে ফেললেন। তখন দেশবন্ধু আরও গম্ভীর হয়ে বললেন, যিনি টাকাটা দেবেন, তাঁর একটা শর্ত আছে। তোমাকে তাঁর মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। সুভাষ তো হতবাক। কী বলবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। অন্যরাও তখন হেসে ফেলেছেন। সুভাষ সঙ্গে সঙ্গে প্রসঙ্গ পাল্টে বাসন্তীদেবীকে বললেন, ‘সারাদিন কিছু খাইনি। খাব বলে এখানে ছুটে এলাম। আর আমাকে খেতে না দিয়ে এইসব কথা শোনানো হচ্ছে!’স্নেহময়ী জননীর মতোই বাসন্তী দেবী ছুটে গেলেন রান্নাঘরে। ভাত বসিয়ে দিলেন সুভাষের জন্য। বিয়ের প্রসঙ্গ উঠে আসত জেলের মধ্যেও। একদিন রসিকতা করে দেশবন্ধু বললেন, ‘ওহে সুভাষচন্দ্র, জেল থেকে বের হয়েই তোমার একটা বিয়ে দিতে হবে।’ সুভাষ হেসে বললেন, ‘আজ্ঞে আমি কি অপরাধ করেছি?’ দেশবন্ধু বললেন, ‘না, তোমার কোনও অপরাধ নেই। কিন্তু স্বরাজ্য ভান্ডারে অনেক টাকার প্রয়োজন। তোমার বিয়ে দিলেই একলাখ টাকা পাওয়া যাবে।’ লজ্জায় সুভাষচন্দ্র সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন। এমনই টুকরো টুকরো নানা ঘটনা, যা অন্য এক চিরন্তন সম্পর্কের ছবি এঁকে দিয়ে যায়।

জেল থেকে বেরিয়ে জড়িয়ে গেলেন উত্তাল গণ আন্দোলনে। এরই মাঝে জাতীয় রাজনীতিতে ঘটেছে অনেক পটপরিবর্তন। গান্ধীজির সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে দেশবন্ধু তৈরি করলেন স্বরাজ্য দল। সেই দলের অগ্রণী সৈনিক সুভাষচন্দ্র। ১৯২৪ নাগাদ কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিশাল জয়। দেশবন্ধু হলেন কলকাতার মেয়র। আর তাঁর প্রধান কর্মাধ্যক্ষ অর্থাৎ চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার হলেন সুভাষচন্দ্র। গণআন্দোলন থেকে এবার প্রশাসকের ভূমিকায় উত্তরণ। অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, বস্তি উন্নয়ন, গরিবদের জন্য গৃহনির্মাণ, উন্নত জল সরবরাহ, বিনামূল্যে চিকিৎসা— এসব কাজে দেশবন্ধুর সঙ্গে আন্তরিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেন সুভাষ। নাগরিকদের সচেতন করতে চালু হল কলকাতা মিউনিসিপাল গেজেট। তবু কোনও সমালোচনা হলেই তিনি বলতেন, ভরসা রাখুন, আমার সেরা লোকটাকে আমি কর্পোরেশনের কাজে লাগিয়েছি। সুভাষের বয়স তখন মাত্র ২৭ বছর। কিন্তু, সব ব্যাপারেই তাঁর উপর ভরসা রাখতেন দেশবন্ধু। নিশ্চিন্তে তাঁর হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে দেশের নানাপ্রান্তে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ছুটে বেড়াতেন।

১৯২৪–এর অক্টোবর। দেশবন্ধু তখন সিমলায়। এদিকে বেঙ্গল অর্ডিনান্স অ্যাক্ট জারি করে সুভাষচন্দ্রকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। স্বরাজ্য দলের প্রভাব খর্ব করার জন্যই এই গ্রেপ্তার। খবর পেয়েই সিমলা থেকে তড়িঘড়ি ফিরে এলেন দেশবন্ধু। টাউন হলে এক বিশাল সভা ডাকলেন। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বললেন, সুভাষচন্দ্রকে যদি বিদ্রোহী বলে ধরা হয়, তবে আমি তার চেয়ে কোনও অংশ কম বিদ্রোহী নই। তাহলে আমাকে গ্রেপ্তার করা হল না কেন? জন্মভূমিকে ভালবাসা যদি অপরাধ হয়, তবে আমিও সমান অপরাধী।

সহযোগী হিসেবে আর সুভাষকে পাওয়া হল না দেশবন্ধুর। শরীর তখন ভেঙে পড়েছে। অনেক চেষ্টা করেও সুভাষকে ছাড়ানো গেল না। এমনকি দার্জিলিঙে দেশবন্ধু যখন শেষ নিঃশ্বাস ছাড়ছেন, তখনও জেলবন্দী সুভাষ। নেতাজির লেখা থেকেই শেষ সাক্ষাতের কথা জেনে নেওয়া যাক ।
‘‘দেশবন্ধুর সহিত আমার শেষ দেখা আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। প্রয়োজনীয় কথাবার্তা শেষ হইলে আমি তাঁহার পায়ের ধুলা লইয়া বলিলাম, আপনার সঙ্গে আমার বোধ হয় অনেকদিন দেখা হইবে না। তিনি তাঁহার স্বাভাবিক প্রফুল্লতা ও উৎসাহের সহিত বলিলেন, না, আমি তোমাদের শীঘ্র খালাস করে আনছি। হায়, তখন কে জানিত যে এই জীবনে আর তাঁহার দর্শন পাইব না। তাঁহার সেই শেষ স্মৃতিটুকু আমার প্রাণের সম্বল হইয়া আছে।’’

Amazon-99-Storee

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.