সিবিআইকে ভরসা করা যায় না, এটুকু অন্তত বুঝিয়ে গেলেন অমিত শাহ

হেমন্ত রায়

প্রতিবার অমিত শাহ আসেন। হুঙ্কার ছেড়ে যান। তিনি কী কী বলবেন, মোটামুটি জানাই থকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। মোটামুটি একই সুরে বাঁধা। সুর চড়িয়ে যেসব বলে গেলেন, তাতে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনে হল না। চিৎপুরের যাত্রাপালায় যেমন চড়াসুরে ডায়লগ বলা হয়, অনেকটা সেই ধাঁচের।

সভার পরেই দলীয় নেতাদের সঙ্গে বসার কথা ছিল। যদিও সেটা প্রকাশ্যে নয়। গোপন বৈঠক। কিন্তু গোপন কথাটি তো সবসময় গোপন থাকে না। এত লোক যখন যুক্ত, তখন গোপন থাকা আরও কঠিন। কানাকানি হয়ে ঠিক বেরিয়ে পড়ে। শোনা যায়, কেউ কেউ নাকি তাঁকে বলেন, সারদা নারদা নিয়ে সিবিআই নীরব। সিবিআই সক্রিয় হলেই তৃণমূল বেকায়দায় পড়বে। তখন ওদের মুখোশ খুলে যাবে। মানুষ আমাদের দিকে আসবে।

amit shah2

রাজ্য বিজেপি নেতাদের এই আবদার অবশ্য নতুন নয়। তাঁরা সিবিআই কী করবে, সেদিকেই তাকিয়ে থাকেন। সেই কথাটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন অমিত শাহ। বুঝিয়ে দিয়েছেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করুন। সিবিআই কী করবে, সেই ভরসায় থাকবেন না।

রাজ্য নেতৃত্বকে অমিত শাহ শুনিয়ে দিলেন। কিন্তু তাঁকে কে শোনাবে? রাজ্য নেতৃত্ব যেমন সংগঠন গড়ে তুলতে পারেন না, হাওয়ার ওপর ভরসা করেন, ঠিক তেমনি অমিত শাহও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ততটাই ব্যর্থ। যতই হুঙ্কার ছাড়ুন, সিবিআই কার্যত একটি চূড়ান্ত ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত। ছ বছর ধরে তদন্ত চলছে। অথচ, একেবারেই অশ্বডিম্ব প্রসব করে চলেছে। যেটা সাতদিনে সমাধান হতে পারত, সেটা এরা সাত বছরেও করতে পারে না। গত বছর এরকম সময়ে রাজীব কুমারকে সিবিআই নাকি হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। তারপর রাজীব দিব্যি বহাল তবিয়তে রইলেন। সিবিআইকেই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী কেন দিল্লি ছুটলেন। পরপর দুদিন কেন প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করতে হল, সেটা অনেকের কাছেই পরিষ্কার। রাজ্যের দাবি নিয়ে বৈঠক। অথচ, রাজ্যের কোনও অফিসার নেই। কেন্দ্রের অফিসারও নেই। কী কথা হয়েছিল, দুজনের কারও বলার সৎ সাহস নেই। অমিত শাহ হুঙ্কার ছাড়ার আগে বলুন, কেন সিবিআই থমকে গেল। রাজ্য নেতৃত্ব বিনীতভাবে প্রশ্নটা তুললেন ঠিকই, কিন্তু অমিত শাহ যে তাঁর ভূমিকায় চূড়ান্ত ব্যর্থ, এই কথাটা তাঁকে মুখের ওপর কে বলবেন?

তবে, অমিত শাহ সারসত্যটা বুঝিয়েই গেলেন। সিবিআইয়ের ওপর খুব একটা ভরসা রাখা যে ঠিক হবে না, এটুকু অন্তত বুঝিয়ে গেলেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.