আবার ব্যালট! বোঝাই যাচ্ছে, সদিচ্ছা নেই

সরল বিশ্বাস

এর মধ্যেই পুরভোটের দামামা বেজে গেছে। কোথায় আগে ভোট হবে, কোথায় পরে, তা নিয়ে নানা জল্পনা। এটুকু নিশ্চিত করেই বলা যায়, ভোটের সূচি তৈরি হবে শাসকদলের সুবিধে—অসুবিধের কথা মাথায় রেখেই। তৃণমূল যদি মনে করে, আগে কলকাতা ও হাওড়ার ভোট করিয়ে নিয়ে, হাওয়া বুঝে শিলিগুড়ি, আসানসোল, সল্টলেকের ভোট করাবে, তাহলে সেটাই হবে। যদি ফলাফল আশানুরূপ না হয়, শতাধিক পুরসভার ভোট অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যেতেও পারে। নির্বাচন কমিশন নামক বস্তুটি যে এবারও কার্যত শাসকের ধামাধরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরবে, তা নিয়ে কোনও সংশয় না রাখাই ভাল।

কিন্তু ভোট কীসে হবে? ইভিএমে নাকি ব্যালটে?  ইচ্ছে করেই বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। শেষমুহূর্তে হয়ত বলা হবে, এখন ইভিএমে করার মতো সময় নেই। তাই ব্যালটেই ভোট করাতে হবে। এর আগেও বহুবার ব্যালটে ভোট করার দাবি জানিয়ে এসেছে তৃণমূল। দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে এই নিয়ে দাবিপত্রও দেওয়া হয়েছে। বুঝে হোক, না বুঝে হোক, তাতে সামিল হয়েছে অন্যান্য বেশ কিছু আঞ্চলিক দল। এমনকী বামেরাও সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন। তাই  এখন রাজ্য প্রশাসন যদি ব্যালটে করার সিদ্ধান্ত নেয়, বামেদের পক্ষে মেনে নেওয়া ছাড়া তেমন উপায় থাকবে না।

vote8

শুধু সময় বেশি লাগবে বলেই কি রাজ্য সরকার ইভিএম এড়াতে চায়? নাকি  খরচ বেশি বলে ? নাকি ইভিএম হ্যাকিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে?  এই তিনটি কারণ হয়ত দেখানো হবে। কিন্তু কোনওটাই সত্যি নয়। অন্তত আসলউদ্দেশ্যের সঙ্গে এই তিনটি কারণের কোনও মিল নেই। প্রথম কথা, পরিচ্ছন্ন ভোট করানোর সদিচ্ছাই নেই। ইভিএম একেবারে কলঙ্কমুক্ত, এমনটা হয়ত বলা যাবে না। কিন্তু ব্যালটে কারচুপির সম্ভাবনা অনেক বেশি। গত বছর পঞ্চায়েতের সময় তার একপ্রস্থ নমুনা পাওয়া গেছে। অধিকাংশ জেলাতেই ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। কোথাও কোথাও আগের রাতেই ভোট চুকে গিয়েছিল। কোথাও সকাল নটার মধ্যেই অপারেশন শেষ। আবার কোথাও কোথাও গণনার সময়েও দেদার ছাপ্পা পড়ছে। এসব ছবি টিভিতে প্রকাশ্যেই দেখা গেছে।

ইভিএমেও ছাপ্পা হয়। কিন্তু সেটা সময় সাপেক্ষ। আধঘণ্টার অপারেশনে পাঁচশো ভোট ছাপ্পা দেওয়া মুশকিল। প্রতিটি ভোটের আগে নতুন করে মেশিন চালু করতে হয়। একটা ভোটের সঙ্গে আরেকটা ভোটের কিছু ব্যবধান থাকে।  ধর তক্তা মার পেরেক ফর্মুলা অন্তত এক্ষেত্রে সেভাবে খাটবে না। তাছাড়া, মেশিনে কখন কত ভোট পড়ল, তার একটা রেকর্ড থাকবে। কোনও বুথ নিয়ে জল আদালতে গড়ালে বা পরাজিত প্রার্থী মামলা করলে অনেককিছুই বেআব্রু হয়ে যেতে পারে।

ঠিকঠাক ভোট করানোর ব্যাপারে রাজ্য সরকারের যে সদিচ্ছা থাকবে না, এটা জলের মতো পরিষ্কার। প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রশাসন  এই বার্তা রেখে যাচ্ছে। ব্যালটে ভোট তারই একটা পদক্ষেপ। আসলে, পরিচ্ছন্ন ভোট করানোর মতো ঝুঁকি এখনও নিতে ভয় পাচ্ছে শাসক দল। পঞ্চায়েতে জুলুমবাজির মোক্ষম শিক্ষা দিতে হয়েছে লোকসভা ভোটে। কিন্তু এর পরেও শিক্ষা হয়নি। নইলে, ব্যালটে ভোট করানোর আয়োজন করতে হত না। যদি সত্যিই রাজ্য সরকার ব্যালটের পথ বেছে নেয়, তাহলে বুঝতে হবে, আবার সেই  বুথদখল আর ছাপ্পাবাজির জন্যই করা হচ্ছে। আবার যদি সেই ট্রাডিশন দেখা যায়, তাহলে তার মাশুল হয়ত দিতে হবে বিধানসভায়। পুরসভা হয়ত দখলে আসবে, কিন্তু কে বলতে পারে, সেটাই হয়ত ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.