সেই ধড়িবাজ, যে আমার প্রাণের ভেতর বাস করে

পিয়াল চ্যাটার্জি

ধড়িবাজ…
কেবল সুকুমার রায়েরই ‘‌পাগলা জগাই’‌ ছিল না। আমাদের অনেকেরই ক্লাসে একটা করে ছিল। আমার ক্লাসেও একটা ছিল। আর সে ছিল আমার প্রিয় বন্ধু। সবে তখন হাফ প্যাডেল। শীতকাল, মাঠে মাঠে ব্যাট বল। খালি বাবার অফিসে যাবার অপেক্ষা। সকাল ন’টার মধ্যে অল ক্লিয়ার। বাবাও টাটা, আমিও হাঁটা।
জগাইয়ের দাদার সাইকেল চড়ে চললাম বড়োরাস্তার দিকে বল কিনতে। আমাদের তখনও বড় রাস্তায় একা যাওয়া নিষেধ। সাইকেল নিয়ে তো নৈব নৈব চ। পাগলা আমাকে বোঝালো, ‘‌আরে তুই আর আমি তো দুজন, একলা কোথায়।’‌
অতএব হাফপ্যাডেলে জগাই, কেরিয়ারে বুক ঢিপঢিপ নিয়ে আমি।


বড়োরাস্তা, অত গাড়ি, লাল টুপি পরা পুলিশ… ভ‍্যাবাচাকা জগাই মারলো এক বুড়িকে গুঁতো। বাবাগো মাগো… ‘‌দৌড়ে এল মুটে মজুর, দৌড়ে এল মালী/ কারুর হাতে ডান্ডা লাঠি, কারুর হাত বা খালি।’‌ পুলিশটা দৌড়ে এসেই জগাইয়ের কানে তিন পাক। জেলে চালান করে আরকি। ফাঁসিও হতেই পারে। ভেবেছিলাম মরেই গেছি, কান ধরে দাঁড় করাতে সম্বিৎ ফিরল। দেখি পাগলা পুলিশ কাকুকে বলছে আমাদের ছেড়ে দাওনা, পাঁচটাকা দেব। বলে কি রে… পকেটে একটাকার একটা ধুলধুলে নোট।
কাকু বলে দে। জগাই বলে সকলের সামনে নেবে। হুম, ওই পানের দোকানে দিয়ে দে।
জগাই আমাকে আর সাইকেল টানতে টানতে পানের দোকানে গিয়ে বলল, ‘‌ওই পুলিশ কাকু বলল পাঁচটা টাকা দিতে। দোকানির তাকানো, পুলিশ কাকুর হাতের ইশারায় পাঁচ দেখানো এবং খানিক বাদেই আমরা ঝুড়িভাজা, হাতলাট্টু আর পাঁচটা বলের মালিক।
আমার ছোট্ট মনের কোনে সোনার অ‍ক্ষরে লেখা হয়ে গেল ‘‌ধড়িবাজ,’‌ যে আমার প্রাণের ভেতর বাস করে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.