‌ধন্যবাদ লকডাউন, বই পড়ার অভ্যেস ফিরিয়ে দিলে

 

নিখিল সেন

মনে আছে, একসময় খুব লাইব্রেরি যেতাম। রোজ একটা বা দুটো করে বই নিয়ে আসতাম। পরেরদিন যেতাম সেগুলো ফেরত দিতে। একদিনেই দুটো বই পড়া হয়ে যেত। যদি দুটো নাও হয়, একটা তো শেষ হতই। সেটাই বদলে নিয়ে আসতাম। যদিও সেই সময় মোটা বই পড়ার অভ্যেস তৈরি হয়নি। লাইব্রেরিয়ান কাকু বলতেন, ওগুলো বড়দের বই। বড় হয়ে পড়বে। আমরাও বিশ্বাস করতাম। তাই ছোটদের জন্য নির্ধারিত বইগুলোই নিয়ে আসতাম। তাছাড়া, ছোট বই একদিনে শেষ হয়। বড় বই শেষ হতে অনেক সময় লাগে। সেই কারণেও ছোটদের বই নিতাম।

তখনও অমনিবাস, বিভিন্ন সংকলনের তেমন চল ছিল না। ফলে ফেলুদা বা কাকাবাবু সমগ্র পড়া হয়নি। খুচরো খুচরো বইগুলোই পড়েছি। কখনও কখনও আগাথা ক্রিস্টি বা শার্লোকহোমসও পড়েছি। গোয়েন্দা কাহিনি থেকে শুরু। পরের দিকে এভাবেই শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, লীলা মজুমদার, সমরেশ মজুমদারদের লেখাও পড়েছি।

মাধ্যমিকের পর থেকেই সবকিছু কেমন যেন বদলে গেল। লাইব্রেরি যেতাম। তবে, আগের মতো নিয়মিত নয়। উচ্চ মাধ্যমিকের পর আরও কিছুটা কমল। এভাবেই বইয়ের সঙ্গে কেমন যেন একটা দূরত্ব তৈরি হল। বইমেলায় টুকটাক বই কেনা হত। সব যে পড়া হত, এমনটা বলা যাবে না। আমার কাছে করোনা ও লকডাউন এক মস্তবড় আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিল। আবার সেই হারানো বই পড়ার অভ্যেস ফিরে এসেছে। সেইসঙ্গে এসেছে অডিও বুক। আগে এটাকে তেমন পাত্তা দিতাম না। কিন্তু ইদানীং বেশ কয়েকটা ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেছি। বেশ ভাল ভাল কিছু গল্প পাচ্ছি। কয়েকজন তো রীতিমতো ভাল গল্প পাঠ করছেন। বেশ ভাল ভাল গল্প তুলে আনছেন। রোজ এভাবেই বেশ কয়েকটা গল্প শুনে নিচ্ছি।

একসময় রাতে ঘুমোনোর আগে গান শোনার অভ্যেস ছিল। কত রাত এভাবেই ভোর হয়েছে। এখন অন্ধকারে আপন মনে একের পর এক গল্প শোনার অভ্যেস তৈরি হয়েছে। কারও সমস্যাও হচ্ছে না। আর চোখ বন্ধ করে শোনার ফলে মন দিয়ে শোনাও হচ্ছে। গত দু’‌ বছরে অন্তত পঞ্চাশখানা উপন্যাস পড়েছি। শুনেওছি অন্তত পঞ্চাশখানা। আর গল্পের সংখ্যা তো প্রায় হাজার। যাঁদের বই কখনও কেনা হয়নি, যাঁদের লেখা কখনও পড়া হয়নি, কৌতূহলে তাঁদের লেখাও পড়ে ফেললাম, শুনে ফেললাম।

এখন আমার ফোনে অসংখ্য গল্প। সারা দিনে দেড় জিবি ফ্রি নেটের সুবাদে মনের সুখে সেইসব গল্প ডাউনলোড করে রাখছি। এখন স্টক এতটাই যে, এক বছর নেট কানেকশন না থাকলেও চলবে। ওগুলোই ঘুরে ফিরে দিব্যি শোনা যাবে। এই লকডাউন আমার কাছে সেদিক থেকে অনেক উপকারী বন্ধুর ভূমিকা নিয়ে হাজির হল। আমাদের সাহিত্যপ্রেমে যে ধুলো জমেছিল, সেই ধুলো অনেকটাই ঝেড়ে দিল। পাশাপাশি, অডিও বুকের ব্যাপারে যে নাক সিঁটকানো ব্যাপার ছিল, সেটাও অনেকটা কেটে গেছে। যাঁরা সাহিত্যপ্রেমী, অথচ অডিও বুক থেকে এখনও দূরে আছেন, তাঁরা চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সাহিত্যের এই নতুন ধারাকে মুক্তকণ্ঠে স্বাগত জানান। ‌

‌‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.