কুণাল দাশগুপ্ত
জন্মই হয়েছিল যেন গানের খিদে নিয়ে। যেমন ভিভ রিচার্ডসের রানের খিদে ছিল। যাদবপুরের পাল বাজারের ছেলে বিশু যে বিশ্বজিৎ দত্ত হয়ে স্বর আর সুরের ওপর কসমেটিক সার্জারি করবেন তা কেই বা ভেবেছিল!
বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মে গানের পিছনে দৌড়ে তা পকেটস্থ করার নেশা বাড়ির উঠোনে তাজমহল বানানোর মতোই অস্বাভাবিক মনোবাসনা ছিল।
বিশ্বজিৎ সাউন্ড রেকর্ডিস্ট। গান তাড়া করার অভ্যেসটা ছিল কিশোর কালেই। বলছিলেন, কিশোরকুমার-আশা ভোঁসলের ‘ফুঁলোকি দুনিয়াসে’ পঁয়তাল্লিশ আরপিএম রেকর্ডটি পেয়েছিলেন এক রিক্সাচালকের বাড়িতে। সে রেকর্ড ছিল শোনার অযোগ্য। সাবান, শ্যাম্পু, লেবু দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়েছিল। মাধ্যমিকের সময় ‘দুসরা আদমি’ দেখার জন্য বেদম মার খেয়েছিলেন বাবার কাছে। বাবা তো শুধু রেকর্ড ভাঙেননি। সাধের ক্যাসেটগুলোও গুড়িয়ে দিয়েছিলেন।
বিশ্বজিৎ হওয়ার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল কলেজ ফেস্টের। সেখানে বদলে যাওয়া অন্তাক্ষরীতে (মিউজিক ক্যুইজ ধাঁচের) প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বজিৎ। এই সময়ে সঙ্গীতগবেষক, লেখক, সঞ্চালক অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য, সিদ্ধার্থ দাশগুপ্তর সঙ্গ সমৃদ্ধ করেছিল বলে জানালেন তিনি।
এরপর নিজে যখন অন্তাক্ষরীর সঞ্চালক হলেন, কিছু পরিবর্তন আনলেন। যেমন প্রিল্যুড এক গানের তার পরে বাজছে অন্য গান। প্রথমে ক্যাসেট তারপর সিডি তারপর কাজটা ডিজিটালি করতে হত। এরই মাঝে বেসরকারি রেডিও চ্যানেলে সঞ্চলনাও করেছেন। এখান থেকেই সাউন্ড রেকর্ডিং-এর স্বপ্ন বেড়ে উঠতে থাকে। ২০০৫ সালে তৈরি করলেন নিজস্ব স্টুডিও। শুরু হল নতুন পথে হাঁটা।
বিশ্বজিতের কথায়, বহু নামী গায়কের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। এর মধ্যে কারও যদি সুরে ঘাটতি থেকেছে, তখন ওই কসমেটিক সার্জারি। মানে প্রযুক্তির সাহায্যে সুরটাকে ঠিকঠাক করে দেওয়া। তবে এও বললেন যে নিতান্ত বেসুরোদের সুরে ফেলা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন ছিল, এই প্রযুক্তি, সফটওয়ার কিশোরকুমার, মহম্মদ রফিদের সময়ে থাকলে কেমন হত? বললেন, এখন শুনতে গেলে যেটুকু খামতি ধরা পড়ে সেগুলো থাকতো না। আর ওঁদের সময় কাজটা কঠিন ছিল। ফাংশনের মতোই। মঞ্চের সঙ্গে স্টুডিওতেও লাইভ করতে হত। কোনও একটা জায়গা গন্ডগোল হলে আবার পুরোটা গাইতে হত। এখন শুধু সেই জায়গাটুকু গাইলেই জুড়ে দেওয়া যাবে। এমনকী মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টের ক্ষেত্রেও গানের সঙ্গে বাজনা থাকতেই হবে, এমন ব্যাপার নেই। আগে পুরো ব্যাপারটা একসঙ্গে হত। এখন আলাদা করেও মিশিয়ে দেওয়া যায়। তবে এখন তাঁরা থাকলে একটা অসুবিধা হতে পারত। তখন মাইক অনেকটা উঁচুতে থাকত। তাই গলা খুলে গাইতেন তাঁরা। গলাটাও তাই ওরকমই হয়ে গিয়েছিল। এখন হলে একটু সমস্যা হয়তো বা হত। তবে ওঁরা যে মাপের শিল্পী, এই নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে নিতেন।
কখনও কাজের জন্য কখনওবা নিছক কৌতূহলে বিশ্বজিতের স্টুডিও ‘ইন্টারল্যুড’-এ গিয়েছি। মনে হয়েছে এতো শুধু স্টুডিও নয়। এও এক বাগান। এখানে ফুলের মতো সুর ফোটে। গানও। সরগমে সরগরম এক সুরেলা প্রতিষ্ঠান ইন্টারল্যুড। বিশ্বজিতের সুরের ‘বাগান।’
1 comment
Beautiful Bisu da you deserve boss !