ব্যবধান ১ লাখ ৬৪ হাজার!‌ স্বয়ং নেতাজি দাঁড়ালেও এত ভোট পেতেন না‌

সুমিত চক্রবর্তী

উপনির্বাচনে চার কেন্দ্রে ফল কী হবে?‌ বিশ্বাস করুন, এতটুকুও সংশয় ছিল না। চার কেন্দ্রেই যে তৃণমূল বেশ বড়সড় ব্যবধানে জিতবে, এটা মোটামুটি জানাই ছিল। কিন্তু তাই বলে এত বড় মার্জিন?‌ এমনটা বোধ হয় কেউই আশা করেননি।

যে উদয়ন গুহ ছ মাস আগে হেরে গেলেন, তিনি কিনা এক লাখ চৌষট্টি হাজার ভোটে জিতে গেলেন?‌ মাত্র ছ’‌মাসে কোন যাদুমন্ত্র বলে এতখানি জনপ্রিয় হয়ে গেলেন!‌ কোনও যুক্তি, কোনও ব্যাখ্যাতেই এই হিসেবে মিলবে না। বাংলা তো দূরের কথা, ভারতও ছেড়ে দিন। সারা পৃথিবীতে এমন নজির আছে কিনা সন্দেহ। গোসাবার ব্যবধান প্রায় দেড় লাখ। খড়দায় প্রায় একলাখ। আর শান্তিপুরেও ষাটের ওপর।

বিধানসভা নির্বাচনে অনেকেই ভেবেছিলেন, বিজেপি হয়ত সরকার গড়বে। সেই কারণে তৃণমূল বিরোধী ভোটের সিংহভাগ গিয়ে জমা হয়েছিল বিজেপির বাক্সে। বিজেপির নেতা–‌কর্মীরা এটাকে তাঁদের সাংগঠনিক দক্ষতা বলে ভেবে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা যে স্রেফ হাওয়াই ছিল, এটা কিছুটা হলেও পরিষ্কার হল। এবারের ভোটে মানুষ ধরেই নিয়েছিলেন, তৃণমূল তো ক্ষমতায় এসেই গেছে। উপনির্বাচনে তারাই জিতবে। তাহলে খামোখা আর অন্য দলে দিয়ে লাভ কী?‌ বিরোধী যদি কেউ জিতেও যান, কদিন পর হয়ত তৃণমূলের পতাকা ধরে নেবেন। আর নইলে, কোনও কাজই করতে পারবেন না। তার থেকে তৃণমূলকে জেতানোই ভাল। ভোটারদের মধ্যে এরকম একটা মানসিকতা কাজ করতেই পারে।

তাই বলে দেড় লাখ!‌ শুধু জনসমর্থন দিয়ে এতটা হয় না। এমনকী প্রবল জনসমর্থন দিয়েও এতটা হয় না। মোদ্দা কথা, ছাপ্পা না হলেও তৃণমূল জিতত। বড় ব্যবধানেই জিতত। কিন্তু এত বড় ব্যবধান ছাপ্পা ছাড়া সম্ভব নয়। যেখানে জয় নিশ্চিত, সেখানে এমন লাগাতার ছাপ্পা মারার কোনও দরকার ছিল?‌ স্বয়ং নেতাজি যদি দাঁড়াতেন, তিনিও কি এই ভোট পেতেন?‌ মমতা ব্যানার্জি দাঁড়ালেও মার্জিন এর অর্ধেক হত না। সেখানে উদয়ন গুহর মার্জিন দেড় লাখ ছাপিয়ে গেলে চোখে লাগে বইকি।

এভাবেই পঞ্চায়েত ভোটকে কার্যত বিরোধীশূন্য করেছিল তৃণমূল। তারই ধাক্কা এসেছিল লোকসভায়। এমনকী, বিধানসভায় এমন বিশাল জয়ের মাঝেও কোচবিহার জেলায় তৃণমূল কিন্তু পেয়েছে মাত্র দুটি আসন। তারপরেও শিক্ষা হল না। তৃণমূল নেতৃত্ব ধরেই নিলেন, গা জোয়ারি করেই জিততে হবে।

বিজেপি নেতৃত্বও তেমনি। যেখানে কয়েকমাস আগে জিতলেন, সেখানে এত ভোটে হার। ন্যূনতম প্রতিরোধটুকুও থাকবে না?‌ ভোট লুঠ হয়েছে, এখন বলা খুব সহজ। কই, নির্বাচন কমিশনে রিপোলিংয়ের আবেদন তো জানাননি। লিখিত অভিযোগও জমা পড়েনি। কেন্দ্রীয় বাহিনীই বা কী করছিল?‌ এটা কার লজ্জা?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.