উত্তম জানা
ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রী হারতে পারেন, এমনটা কি কেউ ভেবেছিলেন? অতিরিক্ত আশাবাদী কেউ কেউ ভেবে থাকতে পারেন। কিন্তু যাঁদের রাজনীতি সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা আছে, তাঁরা প্রত্যেকেই জানেন, মমতা বেশ বড় ব্যবধানেই জিতবেন। ব্যবধান পঞ্চাশ হাজার ছাপিয়ে যাবে, এমন একটা ইঙ্গিত কিন্তু ছিলই।
ফলাফল বেরোনোর পর দেখা গেল, সেটাই হয়েছে। জয়ীকে অভিনন্দন জানানোই স্বাভাবিক রীতি। সেদিক থেকে মমতা ব্যানার্জির অভিনন্দন প্রাপ্য। কিন্তু জয়ের পর যে উল্লাস দেখা যাচ্ছে, তা কেমন যেন দৃষ্টিকটূ লালছে। যদি এই উল্লাস স্বতস্ফূর্ত হত, তাহলে না হয় কর্মীদের আবেগ বলে মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু যেভাবে একই সুরে, একইভাবে জেলায় জেলায়, পাড়ায়–পাড়ায় উৎসব হয়েছে, তাতে বোঝাই যায়, এই উৎসবের তার কোথাও একটা আছে।
কেউ জিতলে আনন্দ হতেই পারে। কিন্তু তার তো একটা সীমা–পরিসীমা থাকবে। কখন আনন্দ করতে হয়, আর কখন তা করতে নেই, এই বোধটুকু তো থাকবে। ধরা যাক, আপনার পাশের বাড়ির কোনও ছেলে মাধ্যমিকে ফেল করেছে। পরের বছর সে আবার পরীক্ষা দিল। এবার পাশ করল। কিন্তু দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় পাশ করার পর তার বাবা যদি পাড়ায় মিষ্টি বিলি করে, সেটা কেমন দেখাবে!
এটাও ঠিক সেরকম। একবার হেরে যাওয়ার পর একজনকে পদত্যাগ করিয়ে উপনির্বাচন ডেকে এনেছেন। সেখানে জিতেছেন। এতে সত্যিই কি এত উল্লাস দেখানোর কোনও কারণ আছে? চুপচার সার্টিফিকেট নেবেন, অনাড়ম্বর শপথ নেবেন, এটাই কাঙ্খিত। তার বদলে পাড়ায় পাড়ায় বিস্টি বিলি, তারস্বরে মাইক বাজানো, কোনওকিছুই বাদ থাকল না।
বিকট আওয়াজে বেজে উঠল, খেলা হবে, খেলা হবে। সেখানে এক জায়গায় মুকুল রায়ের মুণ্ডপাত করা আছে। এক জায়গায় সব্যসাচী দত্তর নামেও প্রায় একই জাতীয় বাক্যালঙ্কার অব্যয়। মুকুল তৃণমূলের পতাকা ধরে নিয়েছেন। সব্যসাচীও ইট পেতে রেখেছেন। আজ না হোক কাল, তিনিও আসবেন। যাঁরা এই গানটা বাজাচ্ছেন, তাঁরা কথাগুলো একবার শুনেও দেখেননি। তাহলেও বাজানোর আগে দু’বার ভাবতেন।
তৃণমূলে তাঁর ইচ্ছে ছাড়া কোনওকিছুই হয় না। এই বিকট উৎসবের পেছনেও কি পরোক্ষ অনুপ্রেরণা ছিল না! তাঁর সায় না থাকলে এমন বিকল উল্লাস হতে পারত! নেতারা সাহস পেতেন!